• বরানগর গুলি কাণ্ডে গ্রেফতার প্রৌঢ়ের স্ত্রী ও প্রেমিক সহ চার
    বর্তমান | ২৪ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: দূর সম্পর্কের পিশেমশাই। তার সঙ্গে গভীর প্রেমে মজেছিল বরানগরের গৃহবধূ। স্বামী-পুত্র কাজে বেরিয়ে গেলে ডেটিংয়ে যেত তারা। স্বামী বিষয়টি বুঝতে পারার পর সম্পর্কে ছন্দপতনের শুরু। একসময়ে স্ত্রীর কাছ থেকে ফোন কেড়ে নিয়েছিলেন স্বামী। তাতেও দমেনি গৃহবধূ। পরিচিতের ফোন থেকে প্রেমিক পিশেমশাইকে ফোন করে স্বামীকে শিক্ষা দিতে বলেছিল মহিলা। তারপরই স্বামীকে গুলি করে খুনের ছক কষা হয়। বরানগরের গুলি কাণ্ডে পুলিশ অভিযুক্ত গৃহবধূ রেখা মজুমদার, তার প্রেমিক প্রদীপ দে ছাড়াও সুশান্ত আদক ও মহম্মদ শামিম লস্করকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের এদিন বারাকপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ১০ দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

    শুক্রবার  সকালে বরানগরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দা বিকাশ মজুমদার আবর্জনা ফেলতে গিয়ে আক্রান্ত হন। দুই দুষ্কৃতী বিকাশবাবুকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। কিন্তু বরাতজোরে তিনি রক্ষা পান। নিপাট ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিত ট্রাম কোম্পানির (ডব্লুবিটিসিএল) কর্মী বিকাশবাবুকে খুনের চেষ্টার নেপথ্যে কে, তা নিয়ে এলাকায় জোর চর্চা শুরু হয়। বিকাশবাবুর স্ত্রী রেখা মজুমদার গৃহবধূ, ছেলে এয়ারপোর্টের অস্থায়ী কর্মী। ঘটনার দিন রেখা স্বাভাবিক আচরণই করছিল। গৃহবধূ সংবাদমাধ্যমকে বলেছিল, আমার স্বামীর কোনও শত্রু নেই। কারা, কী উদ্দেশ্যে হামলা করল, তা নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। চাই, দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া হোক।

    পুলিশ তদন্তে নামতেই রহস্যের জট খুলতে শুরু করে। জিজ্ঞাসাবাদে রেখাদেবীর অসংলগ্ন কথা তদন্তকারীদের সন্দেহ বাড়িয়ে দেয়। তাকে আটক করে টানা জেরা শুরু করতেই ভেঙে পড়ে সে। শনিবার পুলিশ রেখার পিশেমশাই তথা প্রেমিক প্রদীপ দে’কে গ্রেপ্তার করে। তার বাড়ি মেটিয়াবুরুজের ফতেপুর এলাকায়। তাকে জেরা করতেই রহস্যের পর্দা ফাঁস হয়। সেই সূত্র ধরে পুলিশ ওইদিন গুলি চালাতে আসা মেটিয়াবুরুজের সুশান্ত আদক ও বাসন্তীর মহম্মদ শামিম লস্করকে গ্রেপ্তার করে। সুশান্ত বাইক চালিয়ে বরানগরে এসেছিল। পিছনে বসে গুলি চালিয়েছিল শামিম। 

    তদন্তকারীরা জেনেছেন, প্রৌঢ় প্রদীপ রেখাদেবীর দূর সম্পর্কের পিশেমশাই। ওই সম্পর্ককে ঢাল করে তার সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করত গৃহবধূ। সন্দেহের বশে স্ত্রীর ফোন দেখতে গিয়ে বিকাশবাবু সব জেনে যান। স্ত্রীকে সম্পর্ক থেকে বের হতে বলেন। এনিয়ে বাড়িতে অশান্তি হতো। ছেলেও মাকে সাবধান করেছিলেন। প্রায় ১৫ দিন আগে স্ত্রীকে ফের প্রদীপের সঙ্গে কথা বলতে দেখেন বিকাশবাবু। সেই সময় তিনি স্ত্রীর ফোন কেড়ে নেন। এরপর স্ত্রী স্বামীকে শিক্ষা দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এক পরিচিতের ফোন থেকে প্রদীপকে কল করে সমস্ত ঘটনা জানায়। এরপর বিকাশবাবুকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছকে ছিল প্রদীপ। ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে দুই সুপারি কিলারকে ঠিক করে এবং তাদের বন্দুকও জোগাড় করে দেয়। শুক্রবারের ঘটানোর আগে সাতদিন রেকিও করেছিল তারা। 
  • Link to this news (বর্তমান)