• ১ কোটি ভক্ত, ৬ মাসে স্বাবলম্বী দীঘার জগন্নাথ মন্দির
    বর্তমান | ২৪ নভেম্বর ২০২৫
  • অর্ক দে, কলকাতা; গত ছ’মাসেই দর্শনার্থীর সংখ্যা ছুঁয়েছে এক কোটি! উপচে পড়ছে প্রণামীর বাক্স। অনুদান, প্রণামী সহ বিভিন্ন খাত থেকে প্রতি মাসে মন্দিরের আয় হচ্ছে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। ফলে মন্দির পরিচালনার খরচ উঠে আসার পরও উদ্বৃত্ত জমা হচ্ছে ট্রাস্টের ভাঁড়ারে। এভাবে ছ’মাসেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে দীঘার জগন্নাথ মন্দির। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, গত ৩০ এপ্রিল দ্বারোদ্ঘাটনের পর এই ক’দিনেই জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে গিয়েছে জগন্নাথ মন্দির। যে মন্দিরের দৌলতে ‘সৈকতসুন্দরী’ দীঘা আজ আর স্রেফ পর্যটনকেন্দ্র নয়, বাংলার অন্যতম তীর্থস্থানও বটে। 

    চলতি বছর অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করেন। তারপর থেকে আমূল বদলে গিয়েছে সৈকত-শহরের হালচাল। নেমেছে জগন্নাথ ভক্তের ঢল। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে নির্মিত হলেও উদ্বোধনের পর মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব ‘জগন্নাথ ধাম কালচারাল সেন্টার’ নামক ট্রাস্টের হাতে তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্দিরের ট্রাস্টি তথা কলকাতা ইসকনের সহ সভাপতি রাধারমণ দাস বলেন, ‘দ্বারোদ্ঘাটনের পরবর্তী এক মাসেই মন্দিরে প্রায় ৩০ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয়েছিল। এখন দিনে প্রায় ৩০ হাজার পুণ্যার্থী মন্দিরে আসেন। শনি-রবিবার সংখ্যাটা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ছুটির দিন বা কোনও বিশেষ দিনে ভক্ত সমাগম আরও বেশি হয়।’ 

    এই তুমুল জনপ্রিয়তার হাত ধরেই এসেছে আর্থিক সমৃদ্ধি। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, যা আয় হচ্ছে, তাতে খরচ চালিয়েও মাসে ৪০ থেকে ৪৫ লক্ষ টাকা ট্রাস্টের কোষাগারে থাকছে। রাধারমণ দাসের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, দিনে প্রায় এক লক্ষ টাকা আসছে অনুদান এবং উপহার থেকে। ভোগ এবং অন্যান্য প্রসাদ বিক্রি করে দৈনিক আয় হচ্ছে প্রায় দু’লক্ষ টাকা। হুন্ডিতে নগদে জমা পড়ে রোজ এক লক্ষ টাকা। সেই হিসেবে এখন মন্দিরের আয় দিনে সাড়ে তিন থেকে চার লক্ষ টাকা। অর্থাৎ, মাসে ১ কোটি ১০ লক্ষ থেকে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা আসছে। রাধারমন দাস আরও বলেন, ‘মন্দিরের নিরাপত্তা সংক্রান্ত খরচই বেশি। বিদ্যুতের বিল, নিরাপত্তা কর্মীদের মাইনে, নিত্য পুজো, রক্ষণাবেক্ষণ সহ যাবতীয় খরচ মিলিয়ে মাসে কমবেশি ৭৫ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। মন্দিরের নিত্যসেবা এবং নিরাপত্তা, সাফাই, হাউস কিপিং স্টাফ মিলিয়ে প্রায় ১৭০ জনকে নিযুক্ত করা হয়েছে।’

    মন্দির ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছোটো-বড়ো ব্যবসা। মন্দিরের কাছাকাছি এলাকায় মাথা তুলেছে নতুন হোটেলও। সব মিলিয়ে এই মন্দির এলাকার সার্বিক অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে বলেই দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের। কোনও বিশেষ দিনে মন্দিরে ভক্ত সমাগম বাড়লে বাড়তি উপার্জনের আশায় থাকেন ছোটো-বড়ো ব্যবসায়ী, হোটেল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে টোটোচালক বা খেলনা বিক্রেতারা। যেমন, দিনকয়েক আগে গিয়েছে রাস পূর্ণিমা। সেদিন বিপুল সংখ্যক ভক্ত এসেছিলেন জগন্নাথ দর্শনে। ভিড় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশ-প্রশাসনকে। এখন ভিন রাজ্য থেকেও বহু মানুষ আসছেন ভক্তি ও স্থাপত্যের এই অপরূপ মেলবন্ধনের সাক্ষী থাকতে। 
  • Link to this news (বর্তমান)