• ব্যাংকের তথ্য না পেয়ে বচসা, কসবার খুনে ধৃত যুবতী সহ ২, লাস্যময়ীর ফাঁদ পেতে ধনী যুবকদের লুটের চক্র
    বর্তমান | ২৪ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: গোটাটাই নিখুঁত পরিকল্পনা। ডেটিং অ্যাপ। লাস্যময়ী যুবতী ও দালালের আঁতাত। ধনী ঘরের ছেলেদের ‘টোপ’ দিয়ে হোটেলে ডেকে লুট। চক্রের গোটা কর্মকাণ্ড ঠিক এইরকম। ধনী ঘরের বেশিরভাগ ছেলে হওয়ায় সর্বস্ব হারানো সত্ত্বেও অভিযোগ সেই অর্থে ছিল না। কিন্তু সব হিসেব উলটে দিল কসবার হোটেলের ঘটনা। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আদর্শ লোসালকা মদের নেশায় বেহুঁশ হলেন না। আর তাঁর থেকে সহজে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য বা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের ‘পিন’ও মিলল না। পরিণাম? বচসা, হাতাহাতি এবং শেষে খুন। আর এই গোটা ঘটনাক্রম পুলিশের কাছে স্পষ্ট হতে এবং দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করতে সময় লাগল ৩৬ ঘণ্টা। রবিবার কসবা থানা এলাকা থেকেই গ্রেফতার করা হল মূল অভিযুক্ত তরুণী কমল সাহা এবং ডেটিং অ্যাপের ‘দালাল’ ধ্রুব মিত্রকে। পুলিশের কাছে তারা স্বীকার করেছে, ধস্তাধস্তির পর ৩৩ বছর বয়সি আদর্শকে বিছানায় শ্বাসরোধ করা হয়েছে, তারপর ফেলে দেওয়া হয়েছে মেঝেতে। বহুজাতিক সংস্থার ওই কর্মীর মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরই শনিরার ভোররাতে এই দুই অভিযুক্ত বেরিয়ে গিয়েছে হোটেল থেকে।

    বীরভূমের দুবরাজপুরের বাসিন্দা আদর্শের দেহ শনিবার মিলেছিল কসবার একটি হোটেলে। মৃতদেহ পড়ে ছিল মাটিতে। ঘটনাস্থলে গিয়ে গোয়েন্দারা দেখেন, চিৎ হয়ে পড়ে রয়েছেন ওই যুবক। মাথায় আঘাতের চিহ্ন। পা দু’টি বাঁধা। শ্বাসরোধ করা হয়েছে তোয়ালে দিয়ে। মুখে বালিশ চাপা দেওয়ার লক্ষণও রয়েছে। ঘরে ছড়িয়ে অব্যবহৃত কনডোম। কিন্তু নিহতের দু’টি মোবাইল বা মানিব্যাগের হদিশ নেই। শুরু হয় তদন্ত। বের করা হয় আদর্শর কল ডিটেইলস। সঙ্গে হোটেলে তাঁর চেক ইনের আগে থেকে যাবতীয় সিসি ক্যামেরা ফুটেজ। দেখা যায়, প্রথমে এক তরুণী ও যুবক মাস্ক পরে ঢুকছে হোটেলে। রুমে ঢোকার সময়ও মুখে মাস্ক। তারপর আদর্শর চেক ইন। ওই তরুণীকেই পরের ফুটেজে দেখা যায় আদর্শর ঘরে যেতে। তারপর অন্য যুবককেও। ভোররাতে তাদের দু’জনের একসঙ্গে ‘চেক আউটে’র ছবিও আসে পুলিশের নজরে। তারা নিশ্চিত হয়ে যান, অপরাধ প্ল্যান করেই ঢুকেছিল তারা।

    কিন্তু এর উৎস কোথায়? আদর্শর সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ঘাঁটতে গিয়ে তদন্তকারীরা দেখেন, তিনি সম্প্রতি একটি ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করছিলেন। সেখান থেকেই পাওয়া যায় একটি ‘বিশেষ’ ফোন নম্বর, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট। আর মেলে একটি অপরিচিত নম্বর। ট্র্যাক করে পুলিশ জানতে পারে, শুক্রবার সেটি কসবার ওই হোটেলেই ছিল। গ্রাহকের পরিচয়? বারাকপুরের কমল সাহা। 

    তদন্তে জানা গিয়েছে, একটি রুমে ছিল দালাল তথা ডেলিভারি সংস্থার কর্মী ধ্রুব। অন্যটিতে ওই তরুণী ও আদর্শ। শুধু ‘অ্যাডভান্স’ নয়, অভিযুক্ত কমল ঘনিষ্ঠ হওয়ার ভান করে সর্বস্ব হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের। কিন্তু বাগে আনতে না পেরেই ডাকে ধ্রুবকে। দরজা খুলেই রেখেছিল তরুণী। সটান ঢুকে আসে ধ্রুব। অভিযোগ, তারপর দু’জন মিলে শ্বাসরোধ করে আদর্শর। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, শনিবার ভোররাতে হোটেল থেকে বেরিয়ে দুই অভিযুক্ত আলাদা আলাদা অ্যাপ বাইক বুক করে। পুলিশ খোঁজ নিয়ে দেখে, তারা নেমেছে উল্টোডাঙায়। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন থেকে জানা যায়, রাতভর বাইপাস চত্বরে ঘোরাফেরা করেছে তারা। পুলিশের তাড়া খেয়ে শেষ পর্যন্ত পরিচিত এক আইনজীবীকে ফোন করে অভিযুক্ত তরুণী। তাঁর কথামতো রবিবার দুপুর ৩টে নাগাদ কসবা থানায় এসে পৌঁছোয় দুই অভিযুক্ত। তখনই তাদের গ্রেফতার করা হয়। 
  • Link to this news (বর্তমান)