রাজু চক্রবর্তী, কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ সহ ১২ রাজ্যে এসআইআর ঘোষণা হয়েছে ২৭ অক্টোবর। অথচ, তারও একমাস আগে, ২৫ সেপ্টেম্বর একটি টেন্ডার ডাকে সিইও দপ্তর—ভোট সংক্রান্ত কাজে রাজ্যজুড়ে এক বছরের চুক্তিতে হাজার ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নেওয়া হবে। তার জন্য বেসরকারি এজেন্সিগুলিকে দরপত্র দিতে বলা হচ্ছে। বিধানসভা নির্বাচন বহুদূর, এসআইআরের ঘোষণাও হয়নি। তা সত্ত্বেও এই বিপুল সংখ্যক কম্পিউটার কর্মী নিয়োগের অর্থটা পরিষ্কার ছিল, সাধারণ কাজের জন্য এত ডেটা এন্ট্রি অপারেটর লাগে না। অর্থাৎ, এসআইআর আসছে। তখন ভোটার ম্যাপিং, ইলেক্টোরাল রোল তৈরি সহ বিপুল কাজ করতে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর প্রয়োজন হবেই। সেই জন্যই নিজেদের ‘আখের’ গুছিয়ে রেখেছে কমিশনের অধীনস্থ সিইও দপ্তর। কিন্তু এক মাসের সময়সীমায় বিএলওদের নাভিশ্বাস উঠে যাওয়া সত্ত্বেও গা নেই তাদের! ১৯ দিনে এই ১২টি রাজ্যে ১৮ জন বিএলওর মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। অধিকাংশই আত্মঘাতী। তারপরও ২১ নভেম্বর কমিশন বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রত্যেক জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিককে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এসআইআরের কাজে চুক্তিভিত্তিক ডেটা এন্টি অপারেটর, বিএসকে কর্মীদের নিয়োগ করা যাবে না। সেখানে আরও বলা হয়েছে, কয়েকটি জেলায় এই ধরনের কর্মী নিয়োগের খবর পাওয়া গিয়েছে। এমনটা হলে সংশ্লিষ্ট বিডিও, এসডিও সহ ভোটের কাজে যুক্ত আধিকারিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অর্থাৎ, এই নিষেধাজ্ঞায় বার্তাটা পরিষ্কার—বিএলওদের ডেটা এন্ট্রির জন্য কোনও সহায়ক দিতে পারবে না জেলা প্রশাসন। সব কাজ বিএলওদেরই করতে হবে। আর কখন এই নিষেধাজ্ঞা জারি হল? বঙ্গ বিজেপির পক্ষ থেকে কমিশনে চিঠি যাওয়ার ঠিক পর। ফলে, একে সাফ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে তোপ দাগছে তৃণমূল। বলছে, পুরোটা কমিশনের দ্বিচারিতা।
কী ছিল বঙ্গ বিজেপির চিঠিতে? তারা অভিযোগ করেছিল, এভাবে নাকি ভোটারদের যাবতীয় তথ্য শাসক তৃণমূলের হাতে চলে যাবে। তাতেই এমন নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু যে এক হাজার অপারেটর নিয়োগের জন্য কমিশন টেন্ডার ডেকেছিল, তাঁরাও তো বেসরকারি সংস্থারই নিয়োগ! সেক্ষেত্রে তথ্য ফাঁসের ভয় নেই? তাঁদের হাতেই তো আম জনতার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। অভিজ্ঞ মহল বলছে, ওয়েবেল কিংবা এনআইসির মতো সরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব কেন দেওয়া হল না? নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরিতে এই ডেটা এন্ট্রি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনও ত্রুটি হলে তার দায় বেসরকারি সংস্থা নেবে না। অথচ, গোটা রাজ্যের ভোটারদের ডেটাবেস চলে যাবে তাদের নিয়ন্ত্রণে। তাঁরা সিইও দপ্তরের পাশাপাশি জেলা সদর, ব্লক, মহকুমা স্তরে কেন্দ্রীয়ভাবে কাজ করবেন। সেখানে ‘ছাড়’ দেওয়া হলে বিএলওদের পাহাড়প্রমাণ চাপ কমাতে প্রশাসন যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, বা সহায়ক নিয়োগ করে সেখানে আপত্তি কোথায়? রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সরাসরি বলেছেন, ‘এই ঘটনা নির্বাচন কমিশনের দ্বিচারিতাই প্রকাশ করেছে। বিজেপির উসকানিতে ওরা বাংলার ভোট প্রভাবিত করার খেলায় নেমেছে। কারণ, ওদের চিঠি দেওয়ার পরই এই সিদ্ধান্ত।’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের যুক্তি, ‘ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়ে নির্বাচন কমিশন যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা তাদের ক্ষমতাবলে। এখানে বিজেপির কিছু করার নেই। তৃণমূলের কিছু বলার থাকলে সুপ্রিম কোর্টে যাক।’