• নেই কোনও স্থায়ী ভবন, বছরের পর বছর ঝুঁকি নিয়েই চলছে সিংহভাগ আইসিডিএস
    বর্তমান | ২৪ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের চিত্র উদ্বেগজনক। জেলায় প্রায় ১০ হাজার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র তিন হাজার কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন রয়েছে। বাকি কেন্দ্রগুলি চলছে হয় কারও বাড়িতে, না হয় ক্লাবঘরে। কোনও কোনও জায়গায় তো খোলা আকাশের নীচে বসেই লেখাপড়া করে শিশুরা। এমনও আইসিডিএস কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে খুন্তি-কড়াইয়ের আওয়াজ আর নামতা পাঠ একইসঙ্গে হয়। কারণ পড়াশোনা আর রান্না হয় একই ঘরে। পড়াশোনার একেবারে অনুপযুক্ত পরিবেশ। কবে স্থায়ী ভবন হবে, সেই অপেক্ষায় দিন গুনছেন সিংহভাগ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা।

    অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র হল গ্রামীণ ও প্রান্তিক শিশুদের নিরাপদ আশ্রয়ের জায়গা। সঙ্গে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা। এখানেই রয়েছে তাদের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা। একইসঙ্গে এলাকার গর্ভবতী মহিলাদেরও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয় পুষ্টিবর্ধক খাবার। কিন্তু বাস্তব ছবি সম্পূর্ণ বিপরীত। অনেক কেন্দ্রে ছাউনি পর্যন্ত নেই। বর্ষাকালে কাদামাখা মাঠে বা জল জমা উঠোনের দালানে বসে শিশুদের পাঠদান করা হয়। গরমকালে যেমন রোদে পুড়তে হয়, তেমনই শীতকালে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে দিন কাটে শিশুদের। সরকারিভাবে আইসিডিএস কেন্দ্রগুলিকে পড়ুয়ামুখী করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই জায়গায় উলট পুরাণ উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়।

    প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় মোট ১০,৩৬৮টি আইসিডিএস কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ২,৮২৬টি কেন্দ্রের রয়েছে নিজস্ব ভবন। বাকি কেন্দ্রগুলিকে অবশ্য ঘর ভাড়া বাবদ টাকা দেয় রাজ্য সরকার। গ্রামীণ এলাকায় মাসিক ভাড়া দু’হাজার টাকা। আর শহরের ক্ষেত্রে ভাড়া মেলে ছ’হাজার টাকা। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় গৃহহীন আইসিডিএস সেন্টারগুলির জন্য বছরের পর বছর ধরে ভাড়া বাবদ টাকা গুনছে সরকার। কিন্তু স্থায়ী ভবন তৈরির বিষয়ে প্রশাসনের হেলদোল নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বারাসতের এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বলেন, নিজস্ব ভবন না থাকায় কাজ করতে খুব অসুবিধা হয়। খোলা মাঠে বসা যায় না। শীতকালে বহু অভিভাবক ছেলেমেয়েদের পাঠান না। আমাদের সেন্টার একটি ক্লাবঘরে চলছে। সরকারের এনিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এই অবস্থায় শিশুরা শুধু শিক্ষা নয়, শারীরিক বিকাশ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।

    মাঝেমধ্যেই প্রতিটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন তৈরির আশ্বাস শোনা যায় প্রশাসনের তরফে। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও সেই আশ্বাস বাস্তবায়িত হয়নি। কেবল সরকারি ফাইল এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে ঘোরে। প্রায়ই শোনা যায়, প্রকল্পের কাগজপত্র নাকি তৈরি হচ্ছে। এ নিয়ে জেলাশাসক শশাঙ্ক শেট্টিকে ফোন ও মেসেজ করা হলেও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এদিকে, জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, জমি জটের কারণে সমস্যা হচ্ছে। তবে এতদিনেও কেন এই সমস্যার সমাধান হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)