• 'হাই! ডু ইউ নো মন্টি?' কাতর আর্তি ফরাসির
    এই সময় | ২৪ নভেম্বর ২০২৫
  • এই সময়, কোচবিহার: সামাজিক মাধ্যমে পরিচয়। সেই বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার প্রবল ইচ্ছা। আর তার জন্য বেছে নিয়েছিলেন বন্ধুর জন্মদিনের দিনটিকে। সুদূর প্যারিস থেকে ভারতে এসেও বন্ধুর দেখা না পেয়ে ফিরতে হলো তাঁকে।

    শনিবার দুপুরে কোচহবিহারের তুফানগঞ্জ শহরে টোটোয় করে ঘুরতে দেখা যায় এক বিদেশিকে। দীর্ঘদেহী, ফর্সা, চট করে নজরে পড়ার মতো। এ দিক, ও দিক ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। কোথাও নামছেন, আবার উঠে পড়ছেন টোটোয়। দু'হাতে দু'টি ব্যাগ, একটি ব্যাগ পিঠে। পথচলতি মানুষ থেকে মোটরবাইকের চালক, যাকে সামনে পেয়েছেন, ভাঙা ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করেছেন— 'হাই! ডু ইউ নো মন্টি?' না, তাঁর কাছে তেমন কোনও তথ্য ছিল না। ছিল না অদেখা বন্ধুর ছবি। শুধু এটুকু জানেন, বন্ধু থাকেন ভারতের তুফানগঞ্জে। তাঁর পুরো নাম জানা নেই, শুধু জানেন মন্টি। বাড়ি বোচামারিতে, জন্মদিন ২২ নভেম্বর। তাঁকে কথা দিয়েছিলেন, জন্মদিনে সঙ্গে দেখা করতে সাত সমুদ্র পার করে আসবেন।

    কিন্তু, এ দেশে পৌঁছে দেখেন, মন্টির ফোন বন্ধ! তাই অক্টাভ দিনভর বন্ধুর খোঁজে ঘুরে বেড়ালেন অচেনা দেশের রাস্তায় রাস্তায়।

    ৪৫ বছরের ফরাসির বাড়ি প্যারিসে। এই প্রথম তাঁর ভারতে আসা। দেশ থেকে রওনা দিয়ে দিল্লি হয়ে কলকাতায়। কোচবিহার হয়ে তুফানগঞ্জে পৌঁছন। শনিবার শহরের এনএনএম হাইস্কুলে ফরাসি নাগরিককে দেখতে ভিড় জমে যায়। তাঁর ভাষা কেউ বুঝতে পারছিলেন না, তিনিও স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায় শুধু ঘাড় নাড়ছিলেন। বার বার দেখাচ্ছিলেন একটা আইফোন। সেটি তিনি বন্ধুকে উপহার দেবেন বলে এনেছেন প্যারিস থেকে।

    অক্টাভ বৈধ ভাবে ভারতে এসেছেন কি না, কী তাঁর উদ্দেশ্য, সব কিছু বোঝার চেষ্টা করে তারা। ভাষা সমস্যা থাকলেও পুলিশ বুঝে যায়, তিনি পাসপোর্ট–ভিসা নিয়ে এ দেশে এসেছেন। অক্টাভের কাছ থেকে নম্বর নিয়ে পুলিশ ফোন করে মন্টির নম্বরে। বোচামারিতে খবর যায়। সেখানকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়, মন্টি নামে কে আছেন। এটা কি কারও ডাকনাম। না, এ নামের কাউকে পাওয়া যায়নি।

    পুলিশও হাল ছেড়ে দেওয়ায় স্কুলের সামনে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন ফরাসি নাগরিক। বিষণ্ণ, হতাশ হয়ে কিছু বলতে চান, কিন্তু ভাষার ব্যবধানে সেটাও দুর্বোধ্য রয়ে যায়। শনিবার রাতে তুফানগঞ্জের হোটেলে থাকেন অক্টাভ। সকাল হলে যদি বন্ধুর খোঁজ পাওয়া যায়, এই আশায়। যা পূরণ হয়নি।

    রবিবার ফ্রান্সের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি, একটা প্রশ্নের উত্তর না নিয়েই— 'হাই! ডু ইউ নো মন্টি?'

  • Link to this news (এই সময়)