ভারতের ৫৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ সূর্য কান্তের
প্রতিদিন | ২৪ নভেম্বর ২০২৫
সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: সোমবার ভারতের ৫৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিলেন বিচারপতি সূর্য কান্ত। দেশের বিচার ব্যবস্থার সর্বোচ্চ পদে প্রায় ১৫ মাস কাজ করবেন তিনি। হিন্দিতে শপথ নিয়েছেন তিনি। রাষ্ট্রপতিভবনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপরাজ্যপাল সি পি রাধাকৃষ্ণণ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, রাজ্যসভার দলনেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডা-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা। তাঁদের সামনে বিচারপতি সূর্য কান্তকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
শপথে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রকের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল। এরসঙ্গেই উপস্থিতির তালিকায় ছিলেন সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়, বিদেশ থেকে আসা বিচারপতিদের দল-সহ সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বিচারপতিরা। ছিলেন প্রশান বিচারপতি সূর্য কান্তের পরিবারের সদস্যরা। শপথ গ্রহণ করার পর মা, বাবা ও পরিবারের গুরুজনদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন তিনি। সূর্য কান্তের ব্যক্তিগত আমন্ত্রিতদের তালিকায় ছিলেন তাঁর স্কুল কলেজের বন্ধু, শিক্ষক, গ্রামের পড়শি মিলিয়ে প্রায় হাজার জন। এঁদের মধ্যে ২৩৫ জন রাষ্ট্রপতি ভবনে এসেছিলেন। বাকিরা সুপ্রিম কোর্টের অডিটোরিয়ামে বসে দেখেছেন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান।
নিয়মমতো দেশের প্রধান বিচারপতির অবসর গ্রহণের মাসখানেক আগে থেকেই পরবর্তী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের তৎপরতা শুরু হয়। সেই হিসেবে গত মাসেই প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই তাঁকে নিয়োগের সুপারিশ পাঠান কেন্দ্রকে। এরপরেই রাষ্ট্রপতি মুর্মু সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্তকে ভারতের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত করেন। রবিবার অবসর নিয়েছেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি গাভাই। তাঁর জায়গায় সোমবার শপথ নিলেন প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত। ২০২৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই পদে থাকবেন তিনি।
বিচারপতি হিসেবে দুই দশকের কর্মজীবনে, বিচারপতি সূর্য কান্ত অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। তাঁর বিভিন্ন রায়ের মধ্যে রয়েছে কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিল থেকে শুরু করে পেগাসাস সফটওয়ার মামলা। বিচারপতি সূর্য কান্ত সেই সাংবিধানিক বেঞ্চের সদস্য ছিলেন যার রায়ে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল সাংবিধানিক বৈধতা পায়।
ব্রিটিশ জমানার রাষ্ট্রদ্রোহ আইন (আইপিসি ১২৪এ ধারা) বাতিল হয়ে যায় তাঁরই এজলাসে। রাষ্ট্র বিচার বিভাগীয় তদন্ত এড়াতে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে না, এই রায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন বিচারপতি সূর্য কান্ত।
১৯৬২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি হরিয়ানায় জন্ম হয় বিচারপতি সূর্য কান্তর। ১৯৮৪ সালে হিসারে তাঁর আইনি যাত্রা শুরু হয়। এরপর পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে কাজের জন্য চণ্ডীগড়ে চলে আসেন তিনি। বিচারপতি সূর্য কান্ত ২০০০ সালের জুলাই মাসে হরিয়ানার সর্বকনিষ্ঠ অ্যাডভোকেট জেনারেল নিযুক্ত হন। ২০০১ সালে তিনি সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে মনোনীত হন। ২০০৪ সালের ৯ জানুয়ারী পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি।
পরবর্তীকালে ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর ২০১৯ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হন। ২০২৪ সাল থেকে সুপ্রিম কর্টের ‘লিগাল সার্ভিস কমিটি’র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।