শহরের হোটেলগুলিতে একের পর এক খুন! ‘সারপ্রাইজ চেকিং’য়ের নির্দেশ লালবাজারের
প্রতিদিন | ২৪ নভেম্বর ২০২৫
অর্ণব আইচ: কেউ কি জাল আধার কার্ড বা পরিচয়পত্র নিয়ে হোটেলে থাকছেন? তার কি কোনও অভিসন্ধি রয়েছে? শহরের প্রত্যেকটি হোটেলে গিয়ে এবার ‘সারপ্রাইজ চেকিং’ করতে হবে পুলিশকে। হোটেলের যে কোনও বোর্ডারের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদও করতে হবে পুলিশকে। বোর্ডারের পরিচয়পত্রের ছবির সঙ্গে তাঁর চেহারা মিলছে কি না, তা খতিয়ে দেখবেন পুলিশ আধিকারিকরা। শহরের প্রত্যেক থানার ওসিকে এমনই নির্দেশ লালবাজারের।
সূত্রের খবর, ক্রমে জেলার সদরগুলির হোটেল কর্তৃপক্ষও যাতে এভাবে পরীক্ষা চালায়, তার জন্য কড়া হচ্ছে রাজ্য পুলিশও। এদিকে, লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, পর পর কলকাতায় পার্ক স্ট্রিট ও কসবায় হোটেলের ঘরের ভিতর খুনের ঘটনা ঘটেছে। তারই জেরে রবিবার লালবাজারের কর্তাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। শহরের হোটেলগুলির জন্য বেশ কিছু প্রয়োজনীয় নির্দেশিকাও তৈরি করছে লালবাজার। এ ছাড়াও হোটেলের নিরাপত্তার ব্যাপারে পুলিশ কমিশনার লালবাজারের পুলিশকর্তাদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশও দেন। লালবাজারের মতে, সারা শহরের নিরাপত্তার জন্য হোটেলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শনিবারই অপরাধ দমন সংক্রান্ত বৈঠকে প্রত্যেকটি থানার ওসি ও গোয়েন্দা দফতরকে লালবাজারের কর্তাদের নির্দেশ, শহরের প্রত্যেকটি হোটেলে গিয়ে চেকিংয়ের উপর জোর দিতে হবে। তার জন্য এবার থেকে চালু করতে হবে ‘সারপ্রাইজ চেকিং’। ‘র্যানডম’ পদ্ধতি বা হঠাৎই একটি হোটেলের দুই বা চারজন বোর্ডারকে অনুরোধ করতে হবে রিসেপশনে আসতে। প্রয়োজনে পুলিশও তাঁদের রুমের সামনে যেতে পারে। তাঁদের আধার কার্ড বা অন্য পরিচয়পত্র ও বিদেশিদের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট, ভিসা ও অন্য প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্রগুলি পরীক্ষা করতে হবে। পরিচয়পত্রের ছবির সঙ্গে মেলাতে হবে বোর্ডারদের চেহারা। তাঁরা কোথা থেকে এসেছেন, কোথায় তাঁদের পরের গন্তব্য, কী পেশা, সেই ব্যাপারে তাঁদের কাছ থেকে জানতে পারবে পুলিশ। সেই তথ্যের সঙ্গে হোটেলের রেজিস্ট্রার খাতায় দেওয়া তথ্যের মিল রয়েছে কি না, তা জেনে নিতে হবে পুলিশ আধিকারিকদের। লালবাজারের মতে, দিল্লিতে বিস্ফোরণের ঘটনা ও একাধিক হোটেলে খুনের জেরেই পুলিশকর্তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, এদিন হোটেলের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈঠকের পর শহরের প্রত্যেকটি হোটেল, গেস্ট হাউসের প্রত্যেক বোর্ডারের প্রত্যেকদিনের তালিকা সংশ্লিষ্ট থানা ও তার সঙ্গে বিশেষ অ্যাপে আপলোড করার ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ করে বিদেশিদের জন্য ছবি-সহ তাঁদের বিস্তারিত পরিচয়ের ফর্ম ভরে পুলিশকে পাঠাবে প্রত্যেক হোটেল কর্তৃপক্ষ। হোটেলের রিসেপশন, লবি, করিডর, পার্কিংয়ের জায়গায় ক্যামেরা বসানো আবশ্যিক। সেই ক্যামেরায় যাতে সারাক্ষণ নজর রাখা হয়, সেই ব্যাপারেও গুরুত্ব দিতে হবে। হোটেলের রিসেপশনে বড় করে সংশ্লিষ্ট থানা, লালবাজার, দমকল, অ্যাম্বুল্যান্সের নম্বর দেওয়া থাকবে। লালবাজারের নির্দেশ, প্রত্যেক হোটেল কর্তৃপক্ষ যেন নিজেদের কর্মীদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তবেই তাঁদের নিয়োগ করে। কর্মীদের যেন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কোনও বোর্ডারের সন্দেহজনক আচরণ ও গতিবিধি দেখলে কর্তৃপক্ষকে যেন কর্মীরা জানান। কর্তৃপক্ষ যেন অবশ্যই সেই তথ্য পুলিশকে জানায়। হোটেলের ভিতর স্মোক ডিটেক্টর, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ও ব্যবস্থা যেন তৈরি থাকে। হোটেলগুলি নির্দেশিকা না মানলে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।