৩৫ শতাংশ বুথেই তৃণমূলের বিএলএ-র নাম নেই! নেপথ্যে কমিশনের চক্রান্ত?
প্রতিদিন | ২৪ নভেম্বর ২০২৫
কৃষ্ণকুমার দাস: দলের তরফে ১০০ শতাংশ বুথে প্রতিনিধিদের তালিকা জমা দেওয়া সত্ত্বেও এসআইআর প্রক্রিয়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের ৩৫ শতাংশ বিএলএ-র নাম কেন এখনও নির্বাচন কমিশনে নথিভুক্ত করা হল না? আর এই নাম যদি শেষ পর্যন্ত নথিভুক্ত না হয়, তবে ৯ ডিসেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর যখন ‘ভেরিফিকেশন’ শুরু হবে, তখন তো ওই ৩৫ শতাংশ বুথে কমিশন বা বিরোধীদের ভুয়ো দাবিকে তথ্য দিয়ে চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষেত্রে জোড়াফুলের কেউই থাকবে না। প্রশ্ন উঠেছে, দলের তরফে ১০০ শতাংশ বুথেই বিএলএ-নাম ৩৫% বুথে তৃণমূলের জমা দেওয়া সত্ত্বেও বিজেপি ও নির্বাচন কমিশন যৌথভাবে পরিকল্পিত চক্রান্ত করেই কি মাত্র ৬৫ শতাংশের নাম রেজিস্ট্রেশন দেখিয়ে বাকি ৩৫ শতাংশকে বাদ দিল? নাকি, দলের একাংশের গাফিলতিতেই সমস্ত জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে ‘বিএলএ-২ অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ দেওয়া সত্ত্বেও এখনও নির্বাচন কমিশনের কাছে নাম নথিভুক্ত করা হয়নি?
সূত্রের খবর, ১০০ শতাংশ বুথেই নির্দিষ্ট নাম দিয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার বিলি সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনে এখনও ৩৫ শতাংশ বুথে দলীয় বিএলএ-দের নাম রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার খবর পেয়েই রবিবার থেকেই তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব দ্রুত পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। সোমবার সাংগঠনিক ভারচুয়াল বৈঠকেও স্বয়ং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই নিয়ে সুনির্দিষ্ট বার্তা দিতে পারেন বলে খবর। কারণ, আগামী ৯ ডিসেম্বর এসআইআর প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে কমিশনের তরফে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পরই বুথে বুথে ভোটারদের নাম বাদ পড়া ও সংযোজন নিয়ে আসল লড়াই শুরু হবে। ওই ৩৫ শতাংশ বুথে যদি তৃণমূলের বিএলএ-র নাম ও ছবি কমিশনে নথিভুক্ত না থাকে তবে খসড়া তালিকা প্রকাশের পর চ্যালেঞ্জ জানাতে গেলে পরিচয় ও নামগোত্রহীন রাজনৈতিক প্রতিনিধির দাবি গ্রাহ্যই করা হবে না। সেক্ষেত্রে ‘অ্যাডভান্টেজ’ পেয়ে যাবে নির্বাচন কমিশন তথা কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি। আর তখন একতরফাভাবে ইচ্ছামতো নাম বাদ দেওয়ার সুযোগ পেয়ে যাবে কমিশন। এমনই অভিযোগ তৃণমূলের।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, তিন সপ্তাহের বেশি এসআইআর শুরু হয়ে গেলেও রবিবার পর্যন্ত রাজ্যের ৬৫ শতাংশ বুথে তৃণমূল এবং ৫৫ শতাংশ বুথে বিজেপির বিএলএ-দের নাম রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, “প্রায় ৮৫ হাজার বুথে অর্থাৎ ১০০ শতাংশ বুথেই জোড়াফুলের বিএলএ-দের নাম জমা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন পড়লে বুথে পাঁচজন করেও বিএলএ দিতে পারে তৃণমূল। অভিযোগ, পরিকল্পিত চক্রান্ত করেই নিজেদের পোর্টালে এখনও তৃণমূলের ৩৫ শতাংশ বিএলএ-র নাম রেজিস্ট্রেশন করেনি বিজেপির বি-টিম নির্বাচন কমিশন।”
এসআইআর ফর্ম বিলির সময় বাস্তবে দেখা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর ও উত্তরবঙ্গের দু-একটি জেলা বাদে রাজ্যের অধিকাংশ বিধানসভা কেন্দ্রেই ৫/৭ শতাংশ বুথে মাত্র পদ্মফুলের বিএলএ-রা আছেন। যদিও মাঠে কাজ করা বামপন্থী বিএলএ-দের সংখ্যা কিন্তু পদ্মশিবিরের চেয়ে অনেক বেশি। এসআইআর প্রক্রিয়ায় ৩৫ শতাংশ বুথে এখনও কেন দলীয় বিএলএ নেই? এই প্রশ্নের জবাবে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার জানিয়েছেন, “দলের হিসাবে অবশ্যই ১০০ শতাংশ বিএলএ নিযুক্ত করার জন্য নির্দিষ্ট নাম দিয়েই অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার ইস্যু হয়েছে। কিন্তু কমিশনে নথিভুক্ত মাত্র ৬৫ শতাংশ। কিন্তু কেন? দেখতে হবে ‘এআরও’ নাকি বিএলও, কে বা কারা ইচ্ছাকৃতভাবেই কি নাম রেজিস্ট্রেশন করলেন না, নাকি চিঠিটাই আমাদের কেউ কমিশনের কাছে পৌঁছননি। বিষয়টি পরিকল্পিত চক্রান্ত, নাকি গাফিলতি সেটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।”
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বিরোধী দলের যাঁরা বিএলও হয়েছেন তাঁরা অনেকেই সুকৌশলে তৃণমূলের বিএলএ-দের নাম এখনও নির্বাচন কমিশনে নথিভুক্ত না করেই এড়িয়ে যাচ্ছেন। বাম ও বিজেপির কট্টর সমর্থক বিএলও-রা কমিশনের বাড়াবাড়ি ও ‘কাজের চাপ’ অজুহাত দিয়েই এখনও জোড়াফুলের বিএলএ-দের নাম কমিশনে রেজিস্ট্রেশন করেননি। রাজ্যের অনেক বুথে সরকারি প্রতিনিধি বিএলও-দের সঙ্গে তৃণমূলের বিএলএ-রা বাড়ি বাড়ি ফর্ম বিলি বা সংগ্রহের সময় ঘুরলেও ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার’ জমা দিয়ে এখনও কমিশনের পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করেননি। দেখা যাচ্ছে, একজন বিএলও-র সঙ্গে হয়তো দশজন তৃণমূল কর্মী বা সমর্থক ঘুরছেন কিন্তু তিন সপ্তাহ পরও ‘আসল কাজ’ অর্থাৎ দলের তরফে ‘বিএলএ-অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ পর্ব সম্পূর্ণ করতে পারেনি। বস্তুত সেই কারণে আর মাত্র দু’সপ্তাহ হাতে থাকলেও এখনই দ্বিতীয় পর্যায়ে লড়াইয়ের আগে বাকি ৩৫ শতাংশ বুথে নাম নথিভুক্ত করার জন্য জোর দিতে চলেছে তৃণমূল।