দুয়ারে হাজির পিকনিকের মরসুম। মাইথনে নৌকো মেরামতি ও সাজসজ্জায় ব্যস্ত নৌকা চালকেরা। জলাধারের তীরে গেলেই চোখে পড়বে চরম ব্যস্ততার ছবি। ফি বছর ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে পর্যটকদের ভিড় নামে এখানে। কলকাতা,দুর্গাপুর, আসানসোল, বর্ধমান ও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন লোকজন। পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ডের রাঁচী, জামশেদপুর, বোকারো থেকেও বাস ভর্তি করে পর্যটকেরা আসেন মাইথনের সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশে। পিকনিক সেরে তাঁরা নৌকা বিহার করেন। পাশেই রয়েছে মা কল্যাণেশ্বরী মন্দির। দর্শন শেষে বাড়ি ফেরেন তাঁরা।
ওই দু’মাসের দিকেই বছরভর চেয়ে থাকেন নৌকা চালক ও ছোট-ব্যবসায়ীরা। সারা বছরের রোজগারের সিংহ ভাগ আসে ওই সময়ে। কারণ বছরের বাকি সময়ে পর্যটকদের দেখা তেমন একটা মেলে না। নভেম্বরের মাঝামাঝি শুরু হয় নৌকো মেরামতির কাজ। পুরনো নৌকোর গায়ে পড়ে নতুন রঙের প্রলেপ। বসানো হয় নতুন তক্তা। দাঁড় ও বৈঠার মেরামতি হয়। এখন সে সব চলছে জোরকদমে। কোথাও লাল-নীল-হলুদ রঙে সেজে উঠছে নৌকো, কোথাও ফুল-লতাপাতার নকশা আঁকা হচ্ছে। নৌকা ভ্রমণের পাশাপাশি চা-কফি, মুড়ি-মশলা, খাবারের ব্যবসাতেও জোয়ার আসে পিকনিকের সময়ে। এলাকার হোটেল, লজগুলিতেও ভিড় দেখা যায়। এখন মাইথনে শোনা যাচ্ছে হাতুড়ি-ছেনির ঠোকাঠুকির শব্দ।
নৌকা চালক হেমন্ত দা বলেন, ‘‘পিকনিকের মরসুম শুরু হবে। পর্যটকেরা আসছেন। অন্য সময়ে তাঁরা তেমন একটা আসেন না। এই সময়ের দিকে তাকিয়ে থাকি রোজগারের আশায়। আমরা ৮৬ জন নৌকা চালক রয়েছি।’’ আর এক নৌকা চালক এম ডি লুকমান আনসারি বলেন, ‘‘এখনও সেই অর্থে পর্যটক আসা শুরু হয়নি। ডিসেম্বরে শুরু হবে পিকনিকের মরসুম। সেই দিকে তাকিয়ে আছি। পর্যটকদের ভিড় বাড়লে বেশি করে নৌকা বিহার হবে। অর্থ উপার্জন হবে। নৌকাগুলি মেরামতি ও রং করার কাজ চলছে। তবে পিকনিক স্পটে আরও কিছু উন্নয়ন হলে ভাল হতো। বসার জায়গা, বাচ্চাদের দোলনা বসানো দরকার। একটু সাজানো হলে ভাল হয়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকেও নজর দেওয়া উচিত।’’
স্থানীয় হোটেল মালিকদের সংগঠনের সভাপতি মনোজ তিওয়ারি বলেন, ‘‘পিকনিকের মরসুম আসছে। আশা করছি এ বছর পর্যটকদের ভিড় ভালই হবে।’’ বিডিও (সালানপুর) দেবাঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘‘পর্যটকদের অসুবিধা যাতে না হয় সে দিকে নজর রাখা হবে ব্লক প্রশাসনের তরফে। পাশাপাশি, নৌকা বিহারের সময়ে পর্যটকদের লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করতে বলা হবে।’’