কাজের চাপ নিতে না পেরে শনিবার কৃষ্ণনগরে এক মহিলা বিএলও আত্মঘাতী হন বলে অভিযোগওঠে। অভিযোগ, বিপুল কাজের চাপে অনেক বিএলও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। হুগলির পান্ডুয়ার এক মহিলা বিডিও-র কান্নার ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিএলও-দের সুরাহায় ভোটারদের গণনাপত্রের তথ্য ‘আপলোড’ করতে ডেটা-এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ করা হয়েছেপূর্ব বর্ধমান জেলায়। হুগলিতেওএই সুবিধা দাবি করছেনবিএলওদের অনেকে।
হুগলি জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এই মুহূর্তে ডেটা-এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগের কোনও ভাবনা নেই। প্রশাসনের বক্তব্য, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী বিএলওরাই তথ্য আপলোড করছেন। প্রয়োজনে সুপারভাইজার ও এইআরওরা বিএলওদের ‘গাইড’ করছেন।
এই জেলার বিএলওদের একাংশ অবশ্য নানা সমস্যার কথা বলছেন। অনেকেরই বক্তব্য, ইন্টারনেটের গতির সমস্যায় বা কমিশনের সার্ভার ঠিকমতো কাজ না করায় মাঝেমধ্যেই সব কিছু ব্যাহত হচ্ছে। এক দিনে ৫০-৬০টির বেশি আবেদনপত্র নথিভুক্ত করা যাচ্ছে না। অর্থাৎ, গোটা প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে।
গোঘাট ২ ব্লকের এক বিএলও-র কথায়, আপলোড করা কঠিন নয়। কিন্তু সার্ভার সব সময় সঠিক ভাবে কাজ করছে না। ৪-৫টি ফর্ম আপলোডের পরে লগ-আউট হয়ে যাচ্ছে বা একটি আবেদনপত্র আপলোড করতে ২-৩ মিনিটের বেশি সময় চলে যাচ্ছে। আরামবাগের এক বিএলও জানান, ইন্টারনেটের সমস্যায় শনিবার মাত্র ৩০টি গণনাপত্রের তথ্য আপলোড করতে পেরেছেন। আবার রবিবার ভোরে এক ঘণ্টার মধ্যেই ৪০টি আবেদনপত্র আপলোড করা গিয়েছে।
চুঁচুড়ার এক মাঝবয়সি স্কুল শিক্ষিকা বিএলও হয়েছেন। তাঁর সমস্যা, অনলাইনের কাজে পারদর্শী নন। তাই ডেটা-এন্ট্রিতে সমস্যা হচ্ছে। বিএলওর দায়িত্বে থাকা দাদপুরের এক প্রাথমিক শিক্ষক বলছেন, ‘‘সার্ভারের সমস্যার পাশাপাশি এত কাগজ আপলোড করা সত্যিই চাপের ব্যাপার। ডেটা-এন্ট্রির জন্য কেউ থাকলে সুবিধা হত।’’ চন্দননগরের এক বিএলও-র কথা, ‘‘আমি এই কাজে সড়গড়। তবে, সবার পক্ষে তা সম্ভব নয়।’’
আপলোডিং প্রক্রিয়ার গতি কম থাকার কথা মানছে না জেলা নির্বাচন দফতর। তাঁদের হিসাব, প্রায় ৪৭ লক্ষের মধ্যে ২৩ লক্ষের বেশি (প্রায় ৪৯ শতাংশ) ভোটারের তথ্য রবিবার বিকেল ৪টে পর্যন্ত আপলোড হয়ে গিয়েছে। এই তথ্য জানিয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) তরুণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘যেমন যেমন ফর্ম জমা পড়ছে, তেমনই আপলোড করছেন বিএলও-রা। আজ নিশ্চিত ভাবেই আপলোডিংয়ের কাজ ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।’’
বিএলওরা জানান, ভোটারের আবেদনপত্রে এপিক নম্বর দিলেই নাম-বাবার নাম পাওয়া যায়। তবে তাঁর জন্মতারিখ, আধার, ফোননম্বর-সহ বাকি তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া ফর্মে পুরো লিখতে হয়।বাবা-মা, স্ত্রী বা স্বামীর নাম, এপিক নম্বরও দিতে হয়। ভোটার কার্ডেথাকা ছবির সঙ্গে বর্তমান ছবি মেলাতেও ২-৩ মিনিট সময় লাগছে। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম নেই, তাদের ক্ষেত্রে বেশি দেরি হচ্ছে।