• অসুখ সারাতে উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোয় নতুন প্রযুক্তি
    আনন্দবাজার | ২৪ নভেম্বর ২০২৫
  • চার দশকের পুরনো উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো সারা দেশের মধ্যে প্রাচীনতম। লন্ডন, মস্কোর মতো বিভিন্ন শহরে পুরনো মেট্রো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নত পরিষেবা দিচ্ছে। সেই পথ অনুসরণ করে নানা সমস্যায় ধুঁকতে থাকা কলকাতা মেট্রোকে নতুন প্রজন্মের মেট্রোয় উন্নীত করতে পুরো ব্যবস্থার খোলনলচে বদলের পরিকল্পনা করেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।

    ভবিষ্যতের চাহিদা অনুযায়ী যাত্রী-সংখ্যার চাপ সামলাতে ওই মেট্রোয় দেড় মিনিট বা ৯০ সেকেন্ড ব্যবধানে মেট্রো চালাতে চান কর্তৃপক্ষ। ওই লক্ষ্যে মেট্রোর লাইন থেকে থার্ড রেল, সুড়ঙ্গে বায়ু চলাচল ব্যবস্থা থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ, সবই বদল করা দরকার বলে জানাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। সেই লক্ষ্যে ট্রেন চালানোর জন্য আরও বেশি বিদ্যুতের জোগান দেওয়ার পাশাপাশি সুড়ঙ্গের তাপমাত্রা বজায় রাখা ও বায়ু চলাচল উন্নত করার উপরে জোর দিতে হচ্ছে। এত দিন মেট্রোয় গড়ে তিন থেকে চারটি স্টেশন পিছু একটি করে বিদ্যুতের সাবস্টেশন ছিল। তার বদলে প্রতি স্টেশন পিছু একটি করে বিদ্যুতের সাবস্টেশন তৈরি করার পরিকল্পনা হয়েছে। যাতে বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে ট্রেনের গতি মন্থর না হয়। পাশাপাশি, আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থার সাহায্যে একই সঙ্গে একাধিক ট্রেনকে কম ব্যবধানে ছোটানো যায়। তার অঙ্গ হিসেবে রেলের ‘আমব্রেলা ওয়ার্ক’ প্রকল্পের আওতায় উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোয় নতুন সাতটি সাবস্টেশন তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছে। সেগুলি থাকবে কালীঘাট, নেতাজি ভবন, ময়দান, এসপ্লানেড, মহাত্মা গান্ধী রোড, শোভাবাজার-সুতানুটি স্টেশনের সঙ্গে এবং শ্যামবাজার ও বেলগাছিয়ার মধ্যে। এ ছাড়াও, চাঁদনি চক এবং গীতাঞ্জলি স্টেশনে আগেই সাবস্টেশন তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছে।

    নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জোগান দিতে ইস্পাতের থার্ড রেল বদল করে অ্যালুমিনিয়ামের থার্ড রেল বসানোর প্রক্রিয়া চলছে। ওই কাজ দমদম থেকে টালিগঞ্জের মধ্যে আগেই সম্পূর্ণ হয়েছে। তৃতীয় ধাপে মাটির উপরের মেট্রোপথে থার্ড রেল বদল করা হচ্ছে।

    সুড়ঙ্গে বায়ু চলাচল ব্যবস্থায় বিদ্যুতের জোগান দিতে আগে বছরে ৩ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ ও প্রায় ২১ কোটি টাকা খরচ হত। জল ব্যবহার করে ঠান্ডা বাতাস পাঠানোর প্রযুক্তিও বদল করা হচ্ছে। আগে বিশাল অপকেন্দ্র পাখা (সেন্ট্রিফিউগাল ফ্যান) ব্যবহার করে সমকোণে বাতাস পাঠাযনো হত। তাতে সুড়ঙ্গে কম বায়ুপ্রবাহ এবং উচ্চ চাপ তৈরি হয়। এর ফলে সুড়ঙ্গের তাপমাত্রা কমলেও বিদ্যুতের খরচ অস্বাভাবিক বেশি হয়। ওই সব কুলিং টাওয়ার এবং পাখা তুলে দিয়ে উন্নত প্রযুক্তির অক্ষীয় পাখা (এক্সিয়াল ফ্যান) বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। ওই পাখা সুড়ঙ্গের দেওয়ালে কম চাপ এবং ভিতরে বেশি বায়ুপ্রবাহ তৈরি করে। এর ফলে সুড়ঙ্গের তাপমাত্রাও কম থাকে। নতুন এনভায়রনমেন্ট কন্ট্রোল সিস্টেমে (পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা) অগ্নিকাণ্ডের কারণে কোথাও ধোঁয়া দেখা দিলে খুব দ্রুত ওই ধোঁয়া বার করে ফেলা সম্ভব। ওই প্রযুক্তি চালু হলে মেট্রোয় সুড়ঙ্গ ঠান্ডা রাখার জন্য বিদ্যুতের খরচ উল্লেখযোগ্য হারে নেমে আসবে। আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে ওই সব কাজ সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মেট্রো সূত্রের খবর। পাশাপাশি, সুড়ঙ্গে প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের কাজও করা হবে। মেট্রো কর্তাদের আশা, সব কাজ মিটলে উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর পরিষেবা দেওয়ার সামর্থ্য বহুগুণে উন্নত হবে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)