• ট্র্যাকে ফিরছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, ভারতে আসতে পারেন ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী
    এই সময় | ২৪ নভেম্বর ২০২৫
  • তিক্ততা পেরিয়ে নতুন বোঝাপড়ার দিকে এগোচ্ছে ভারত ও ক্যানাডা। কৌশলগত বোঝাপড়ার জন্য দুই দেশের শীর্ষস্থানীয় আধিকারিকদের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর। নতুন করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে ভারতে আসতে পারেন ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। সূত্রের খবর, আগামী বছরেই দিল্লি সফরে আসতে পারেন তিনি।

    ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নয়া দিল্লিতে গ্লোবাল এআই সামিট হতে চলেছে। সেখান থেকেই ভারত-ক্যানাডা সম্পর্ক নতুন খাতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হতে পারে। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী।

    দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যাক-চ্যানেল কমিউনিকেশন অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আনুষ্ঠানিক ভাবে দ্বিপাক্ষিক স্তরে আলোচনা নয়, আলাদা করে আনঅফিশিয়াল ভাবে কথাবার্তা হয় দুই দেশের আধিকারিকদের মধ্যে। ২০২৩-২৪ সালে যখন ভারত ও ক্যানাডার মধ্যে যখন সম্পর্ক তলানিতে গিয়েছিল, তখন এই ব্যাক চ্যানেল আলোচনাও থমকে গিয়েছিল। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি থেকে সেটা আবার শুরু হয়েছে। তার পর থেকে ভারত ও ক্যনাডার বিদেশমন্ত্রকের আধিকারিকদের মধ্যে একাধিকবার আনঅফিশিয়াল আলোচনা হয়েছে, আগের মতো বিশ্বাসযোগ্যতা ফেরাতেই এই পদক্ষেপ বলে জানা গিয়েছে।

    ক্যানাডার মাটিতে খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দেওয়া নিয়ে বারবার সরব হয়েছে ভারত। ক্যানাডায় খালিস্তানপন্থী জঙ্গি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর খুনের ঘটনায় সরাসরি ভারত সরকারের দিকে আঙুল তুলেছিল তৎকালীন ক্যানাডা সরকার, সেই সময়ে ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জাস্টিন ট্রুডো। নিজ্জর খুনে জড়িত থাকার সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিল ভারত সরকার। বারবার অভিযোগ করলেও, নিজ্জর খুনে ভারতের গোয়েন্দা বাহিনী বা ভারত সরকারের যুক্ত থাকার কোনও প্রমাণ কখনও দেয়নি ক্যানাডা প্রশাসন। সেই সময়েই দুই দেশের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে চলে যায়। একে অন্যের দেশ থেকে রাষ্ট্রদূতকেও সরিয়ে নেয়। তারপরে ক্যানাডার নির্বাচনে হেরে যান জাস্টিন ট্রুডো। তাঁর জায়গায় প্রধানমন্ত্রী হন মার্ক কার্নি। ২০২৫ সালের মার্চে পদে বসেই তিনি ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন খালিস্তানপন্থী জঙ্গি নেতা বা খালিস্থানপন্থী সংগঠনগুলির সঙ্গে কোনওরকম যোগাযোগ রাখা যাবে না। এছাড়া ক্যানাডার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পারও রাজনৈতিক দলগুলিকে খালিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলির থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন।

    এই ভাবনার পিছনে রয়েছে ক্যানাডার গোয়েন্দা সংস্থা CSIS-এর রিপোর্টও। ক্যানাডার মাটিতে খালিস্থানপন্থী জঙ্গি সংগঠনগুলি কাজ চালাচ্ছে বলে সতর্ক করেছিল তারা। ক্যানাডার বাইরে থেকে এই জঙ্গি সংগঠনগুলির কাছে ঘুরপথে ফান্ড আসছে বলেও সতর্ক করা হয়েছিল। ক্যানাডা জঙ্গিগোষ্ঠীর বা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর জন্য খোলা মাঠ হয়ে যাচ্ছে না, এটা প্রমাণ করার জন্যও কাজ করতে হবে ক্যানাডা সরকারকে। মার্ক কার্নি প্রশাসন সে ভাবেই পদক্ষেপ করছে বলে মনে করা হচ্ছে।

    ইতিমধ্যেই বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, ক্যানাডার মন্ত্রী অনিতা আনন্দ এবং মনিন্দর সিং সিধু দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেছেন। মন্ত্রিস্তরে আরও মিটিং হবে বলে সূত্রের খবর। খালিস্তানি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ না নিলে ক্যানাডা ও ভারতের মধ্যে আগের মতো সম্পর্ক ফিরবে না, এটা স্পষ্ট। এদিকে ব্যবসায়িক দিক থেকেও দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়া জরুরি। পড়ুয়া, বিনিয়োগ, আইটি সেক্টরে বিনিয়োগ-ইত্যাদি একাধিক ক্ষেত্রে ভারতের বাজার ক্যানাডার জন্য প্রয়োজন। মার্ক কার্নির সরকার সেদিকে তাকিয়েই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

  • Link to this news (এই সময়)