পিয়ালী মিত্র: কসবা কাণ্ডে এখনও অধরা একাধিক প্রশ্নের। উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযুক্ত ধ্রুব, কোমল ও নিহতের মোবাইল চ্যাটে নজর তদন্তকারীদের। জানা গিয়েছে, ডেটিং অ্যাপে আলাপ হওয়ার পর শুক্রবারই প্রথম দেখা করতে হোটেলে আসেন আদর্শ। তার আগে অভিযুক্ত কোমল সাহার সঙ্গে আদর্শের কী কথোপকথন হয়? জানতে চান তদন্তকারীরা। দুই অভিযুক্তদের মধ্যেই বা কী কথোপকথন হয়?
ডেটিং অ্যাপে ফাঁদ পেতেই আদর্শকে হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অনুমান। হোটেলে ঘনিষ্ঠ মূহূর্তে ছবি তুলে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা এবং তাতে বাধা পেয়েই খুন কিনা ধৃতদের জেরা করে জানা চেষ্টা তদন্তকারীদের। দুজনের বয়ানের এখনও একাধিক অসঙ্গতি। আদর্শকে ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কোনও টাকা তোলা হয়েছে কিনা, তাও জানার চেষ্টা তদন্তকারীদের। ধৃতদের জেরা করে উদ্ধার আদর্শের মোবাইল। আজ দুজনকে তোলা হবে আলিপুর আদালতে।
আদর্শের ময়নাতদন্তে জানা গিয়েছে, তাঁর শরীরে অ্যালকোহল পাওয়া গিয়েছে। মৃত্যুর কারণ: শ্বাসরোধের ফলে মৃত্যু হয়েছে আদর্শের, যা গলায় চেপে ধরার কারণে ঘটেছে।
উল্লেখ্য, রবিবার ধ্রুব এবং কোমল দুজনে আত্মসমর্পন করে। জেরায় ধৃতরা দাবি করেছে, আদর্শ মেঝেতে পড়ে যাওয়ার পর তার নাক থেকে রক্ত বেরোতে দেখে তারা হোটেল থেকে বেরিয়ে যায়। পা বাধার কারণ হিসেবে ধৃতদের দাবি আদর্শ যাতে উঠে গিয়ে আবার ওদের মারধর করতে না পারে সেজন্য পা বেঁধে দিয়েছিল।
প্রসঙ্গত, টিন্ডার, গ্রাউন্ডার, আইল, হিন্জ, বাম্বেল- সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে অসংখ্য ডেটিং অ্যাপের হাতছানি। একাকীত্ব কাটাতে, জীবন সঙ্গী খুঁজে পেতে তো কেউ নতুন বন্ধু পেতে অচেনা মানুষের সঙ্গে ডেটিং অ্যাপে বন্ধুত্ব গড়ে তুলছেন অনেকেই। চলে যাচ্ছেন ব্লাইন্ড ডেটে। অর্থাৎ প্রথমবার কথা হওয়ার পরই অচেনা মানুষের সঙ্গে দেখা করতে চলেছে যাচ্ছেন। ঠিক যেমন ভাবে আদর্শও গিয়েছিলেন। হোটেলে রুমে নৃশংস ভাবে খুন হতে হয় তাঁকে।
তবে শুধু এই একটি ঘটনা নয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ডেটিং অ্যাপের ফাঁদ পেতে শ্লীলতহানি, প্রতারণা, অপহরণে মতো একাধিক অপরাধের ঘটনা ঘটেছে প্রায় প্রতিদিন। বলা যায় ডেটিং অ্যাপে অপরাধের ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। *২০১৮ সালে এই ভাবে ডেটিং অ্যাপে আলাপ হওয়া এক তরুণীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে অপহরণ হয় জয়পুরের এক যুবক। পরে তাঁকে খুন করা হয়। যে ঘটনা কুখ্যাত টিন্ডার মার্ডার নামে। তরুণী-সহ তিনজন গ্রেফতার হয়।*দিন কয়েক আগেই ডেটিং অ্যাপে ফাঁদে পরে ৬৫ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন বাগুইআটির এক ব্যক্তি। অ্যাপে আলাপ হওয়া মহিলা তাঁকে অনলাইনে ট্রেডিং বিনিয়োগের নামে ৬৫ হাতিয়ে নিয়েছে বলে পুলিসের অভিযোগ করেছেন তিনি। *সম্প্রতি কোয়েম্বাটুর পুলিসের হাতে গ্রেফতার হয়েছে এক মহিলা-সহ চারজন। এক তথ্য প্রযুক্ত সংস্থার কর্মীকে ডেটিং অ্যাপে হানি ট্র্যাপ করে টাকা হাতানোর অভিযোগ।*চলতি বছরের মার্চ মাসে দিল্লি পুলিসের স্পেশাল টাস্কফোর্স একটি চক্রকে গ্রেফতার করে। যাঁরা ডেটিং অ্যাপে ফাঁদ পেতেছিল। দেখা করার নামে দামী রেস্তোরাঁতে যেতে বলা হত। মোটা অঙ্কে খাওয়ার বিল করে টাকা হাতানো হত ভিক্টিমের থেকে। বিভিন্ন রেস্তোরাঁ সঙ্গে আঁতাত করে চলছিল সেই চক্র।