• নেওড়াভ্যালিতে মিলল কস্তুরী হরিণ, বাংলায় ৭০ বছর পর, ৩১১২ মিটার উচ্চতায় ট্র্যাপ ক্যামেরায় ছবি
    বর্তমান | ২৫ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: বাংলায় ৭০ বছর পর দেখা মিলল বিপন্ন কস্তুরী মৃগের (মাস্ক ডিয়ার)। তাও আবার নেওড়াভ্যালির জঙ্গলে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ১১২ মিটার উচ্চতায় রাতের অন্ধকারে ট্র্যাপ ক্যামেরায় একটি মাস্ক ডিয়ারের ছবি ধরা পড়েছে। এর আগে ১৯৫৫ সালে দার্জিলিংয়ের সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানে শেষবার কস্তুরী মৃগ দেখা গিয়েছিল। সাত দশক পর ফের বাংলায় কস্তুরী মৃগের ছবি ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়ায় খুশি বনদপ্তরের কর্তারা। 

    উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) ভাস্কর জে ভি বলেন, ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার উদ্যোগে দু’বছর ধরে চালানো সমীক্ষায় নেওড়াভ্যালির জঙ্গলে মাস্ক ডিয়ার বা কস্তুরী মৃগের সন্ধান মিলেছে। সমীক্ষার কারণে বেশকিছু ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হয়। ওই ক্যামেরাতেই নেওড়াভ্যালির জঙ্গলে বিপন্ন কস্তুরী মৃগের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। এটা আমাদের কাছে খুবই ভালো খবর। 

    বনদপ্তর সূত্রে খবর, নেওড়াভ্যালির জঙ্গলে ২০২৩-’২৪ সালে সমীক্ষা চালায় ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। ওই সমীক্ষা চলাকালীন গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর ট্র্যাপ ক্যামেরায় মাস্ক ডিয়ারের ছবি ধরা পড়ে। সমীক্ষা শেষের পর ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখতে গিয়ে নেওড়াভ্যালির জঙ্গলে কস্তুরী মৃগের উপস্থিতির প্রমাণ মেলে। 

    বর্তমানে দেশে চার ধরনের কস্তুরী মৃগ দেখা যায়। ব্ল্যাক মাস্ক ডিয়ার, হিমালয়ান মাস্ক ডিয়ার, অ্যালপাইন মাস্ক ডিয়ার ও কাশ্মীর মাস্ক ডিয়ার। যদিও এদের সংখ্যাটা নিতান্তই হাতেগোনা। মাঝেমধ্যে তাদের দেখা মেলে অরুণাচলপ্রদেশ, হিমাচলপ্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, সিকিম এবং উত্তরাখণ্ডের জঙ্গলে। ৭০ বছর পর বাংলায় কস্তুরী মৃগের দেখা মেলা নিঃসন্দেহে বড় বিষয় বলে মনে করছেন বনদপ্তরের কর্তারা। যদিও নেওড়াভ্যালির জঙ্গলে যে কস্তুরী মৃগের ছবি ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, সেটি কোন প্রজাতির তা এখনও জানা যায়নি। 

    কস্তুরী হল পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সুগন্ধী। যার উৎস মাস্ক ডিয়ার প্রজাতির পুরুষ হরিণ। এদের নাভিতে বিশেষ ধরনের গ্রন্থি থাকে। নির্দিষ্ট বয়সে মাস্ক ডিয়ারের ওই গ্রন্থি বিকশিত হয় এবং তা থেকে কস্তুরী উৎপন্ন হয়। কস্তুরীর ঘ্রাণ এতটাই শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী যে বলা হয়, কোনও ঘরে যদি সামান্য পরিমাণ কস্তুরী রেখে দেওয়া হয়, তাহলে তার সুঘ্রাণ বহু বছর পর্যন্ত থেকে যায়। এর সুগন্ধ এতটাই শক্তিশালী যে, তিন হাজার ভাগ গন্ধহীন পদার্থের সঙ্গে যদি একভাগ কস্তুরী মেশানো যায়, তাহলেও ওই পদার্থ সুবাসিত হয়ে ওঠে। পুরুষ কস্তুরী মৃগের বয়স ১০ বছর হলে পরিপক্ক হয় তার নাভির গ্রন্থি। তখনই শিকারিরা তাকে হত্যা করার করার জন্য ওত পারে। একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থির ওজন সাধারণত ৬০-৬৫ গ্রাম হয়ে থাকে। তবে সব মাস্ক ডিয়ারের নাভিতে সম পরিমাণ কস্তুরী উৎপন্ন হয় তেমনটা নয়। প্রাচীনকালে রাজা-বাদশাহরা কস্তুরী ব্যবহার করতেন। সোনার চেয়ে বহু গুণ মূল্যবান। শুধু সুগন্ধী হিসেবে নয়, ওষুধ শিল্পেও ব্যবহৃত হয় কস্তুরী।  
  • Link to this news (বর্তমান)