হোটেলগুলির উপর নজরদারি নিয়ে ‘এসওপি’, জোড়া খুনের পর কড়া লালবাজার
বর্তমান | ২৫ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এক মাসের মধ্যে শহরের দু’টি হোটেলে খুনের ঘটনা। পার্ক স্ট্রিটের হোটেলে খুন হন ওড়িশার ব্যবসায়ী। ক’দিন আগে কসবার হোটেলে খুন হন এক চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। দু’টি ক্ষেত্রেই অভিযুক্তরা জাল আধার জমা দিয়ে হোটেলের রুম ভাড়া নিয়েছিল। জমা দেওয়া সেই নথি স্থানীয় থানাকে পাঠানো হয়নি। যে কারণে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে রীতিমতো কালঘাম ছুটে যায় তদন্তকারীদের। এই অবস্থায় পুলিশকর্তাদের অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, অধিকাংশ হোটেলই রেজিস্টার পূরণ করছে না যথাযথভাবে। রেজিস্টারের সিংহভাগ কলাম খালি পড়ে থাকছে। কিন্তু নিয়ম হল, হোটেলে আসা অতিথিকেই রেজিস্টার বুকে সমস্ত তথ্য লিখতে হবে। কিন্তু অতিথিদের পরিবর্তে সেই কাজগুলি করছেন হোটেলের ম্যানেজার। যে কারণে বেশিরভাগ কলাম ফাঁকা পড়ে থাকছে। অতিথিদের জমা দেওয়া নথি যাচাইয়ের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পুলিশের কাছে পাঠানো হচ্ছে না। এমনকি, হোটেল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের সমন্বয়ের জন্য যে পোর্টাল রয়েছে, সেখানে সমস্ত তথ্য আপলোড করা হচ্ছে না। এই সুযোগে অনায়াসে অপরাধী হোটেলে উঠে খুনের মতো ঘটনা ঘটিয়ে পালাচ্ছে। ভিন রাজ্যের অপরাধীরা তো বটেই, বিস্ফোরণের মতো ঘটনায় অভিযুক্তও এই সুযোগে শহরের হোটেলে গা-ঢাকা দিচ্ছে। থানার নজর এড়িয়ে বা কিছু ক্ষেত্রে থানার একাংশের মদতে রমরমিয়ে চলছে বেআইনি হোটেল, গেস্ট হাউস। নজরদারির ক্ষেত্রে খামতির কথাও উঠে এসেছে পুলিশের অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনায়। জমা পড়া নথিও ঠিকমতো যাচাই হচ্ছে না অনেক ক্ষেত্রে। এসব কারণেই হোটেলগুলি বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছে।
এই অবস্থায় নড়েচড়ে বসেছে লালবাজার। শহরের হোটেলগুলির জন্য নির্দেশিকা জারির পাশাপাশি থানাগুলিকে কী কী দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন পুলিশের শীর্ষকর্তারা। তাদের তরফে জারি করা এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর)-তে বলা হয়েছে, হোটেলগুলিকে যথাযথভাবে রেজিস্টার পূরণ করতেই হবে। অতিথির নাম, ঠিকানা, কোন জায়গা থেকে এসেছেন, মোবাইল নম্বর ও পরিচয়পত্রের নথি রাখতে হবে। অতিথিরা যে রুমে থাকছেন, সেখানেও তাঁদের কাছে পরিচয়পত্রের কপি থাকবে। এসওপি-তে বলা হয়েছে, যেসব নথি অতিথিরা জমা দিচ্ছেন, সেগুলি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের কাছে পাঠাতে হবে। তারপর পুলিশের তরফে তা নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। যদি জমা দেওয়া নথি ভুয়ো হয়, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হোটেলে গিয়ে অতিথিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।