বঙ্গে বিজেপির সিএএ টোপ? ছ’বছরে মাত্র ৮ জনকে নাগরিকত্ব
বর্তমান | ২৫ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ভোটার তালিকার স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশনে (এসআইআর) বাংলায় কারও নাম বাদ পড়লেও কুছ পরোয়া নেই। একবার মাত্র ভোট দিতে পারবেন না। পরে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) মাধ্যমে দেওয়া হবে নাগরিকত্ব! আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে আবারও নাগরিকত্বের ‘গাজর’ ঝুলিয়েছে বঙ্গ বিজেপির। মূল টার্গেট মতুয়া ভোট। শুরু করা হয়েছে সিএএ ক্যাম্পও। কিন্তু, সেটাও যে নরেন্দ্র মোদি দলের নতুন এক জুমলা, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে খোদ সরকারি পরিসংখ্যানই। কারণ, ছ’বছর আগে কার্যকর হওয়া সিএএ-র অধীনে বাংলায় অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নাগরিকত্ব দিতে সক্ষম হয়েছে মাত্র আটজনকে। সেটাও এক বছর আগে। বিশেষ সূত্রে খবর, বিজেপি এবং কেন্দ্রের কথায় ভরসা করে এরাজ্য থেকে সিএএ-তে ৩২ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে কেন্দ্রের ঘরে। কিন্তু ওই আটজনের বাইরে কারও ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। এই পরিস্থিতিতে বঙ্গ বিজেপির নাগরিকত্বের টোপকে আদৌ ভরসা করবেন তো মতুয়ারা? এসআইআর আবহে উঠছে প্রশ্ন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং এই ইস্যুতে লাগাতার আক্রমণ করছেন গেরুয়া শিবিরকে। তাঁর সাফ কথা, ‘সিএএ আসলে বিজেপির ঝোলানো গাজর। ওরা একদিকে নাগরিকত্বের জুজু দেখাচ্ছে আর অন্য দিকে সিএএ-র গাজর ঝুলিয়ে নির্বাচনি তরী পার করতে চাইছে।’
২০১৯ সালে আইন এলেও সিএএ রুলস জারি করতে আরও পাঁচ বছর কাটিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু তারপরও সিএএ নিয়ে ধোঁয়াশা বজায় রেখেছে মোদি সরকার। প্রাথমিক পর্বে রাজ্য থেকে নাগরিকত্ব পাওয়া বিকাশ মণ্ডল, দেবপ্রসাদ গাইন, শান্তিলতা বিশ্বাসদের নাম প্রকাশ্যে এসেছিল। এছাড়া কোনও তথ্য প্রকাশ্যে না আসায় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, বিগত বেশ কিছু বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সিএএ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ থেকে মাসে ১৫-১৬টি নাগরিকত্বের আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে মঞ্জুর হয় প্রায় ১০-১২টি। এক্ষেত্রে তথ্য প্রকাশে সমস্যা না থাকলে সিএএ-র আবেদন নিয়ে এত রাখঢাক কেন? বিষয়টি নিয়ে তোপ দাগতে ছাড়েননি ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ির সংঘাধিপতি মমতা ঠাকুর। তিনি বলেন, ‘এসআইআর পর্বে নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবিতে মতুয়াদের অনশন সাড়া ফেলে দিয়েছে। তাই সিএএ নিয়ে নতুন টোপ দিচ্ছে বিজেপি। কিন্তু এতে লাভ হবে না।’ তৃণমূলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তীরও কটাক্ষ, ‘এসআইআর ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করায়, সিএএ-র টোপই এখন বিজেপির কাছে একমাত্র অস্ত্র! আজ মতুয়াগড়ে মুখ্যমন্ত্রী যাচ্ছেন। বিজেপির মতুয়া ভোটব্যাংকে যে এবার ধস নামবে, তা স্পষ্ট।’ সিএএ নিয়ে অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। তিনি জানিয়েছেন, ‘আবেদন করেও শংসাপত্র হাতে না পাওয়ার ব্যাপারটা আমরাও জানি। তাই আমরাও কাজে গতি আনার কথা সরকারকে জানিয়েছি।’