হাবড়া: ভেষজ রং তৈরিতে শিশু, শিরীষ গাছ থেকে ছত্রাক সংগ্রহ শুরু
বর্তমান | ২৫ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: ভেষজ রং এবং আবিরের চাহিদা আছে বাজারে। আবির তৈরির মূল সামগ্রী হল শিশু বা শিরীষ গাছের ছালে জন্মানো ছত্রাক। বর্ষাকালে বৃষ্টির জল চুঁইয়ে চুঁইয়ে জমে গাছের বাকলে। তাতে ছত্রাক গজিয়ে ওঠে। বর্ষা শেষ। শীত পড়ছে। দেখতে দেখতে এসে যাবে ফাগুন। তখন দোল উৎসব। তার আগে গাছের বাকলে জন্মানো ছত্রাক সংগ্রহ করতে হাবড়ার বিভিন্ন জায়গায় হাজির হয়েছেন ‘গাছুরে’রা। ভোর থেকে গাছের গায়ে জন্মানো ছত্রাক সংগ্রহে লেগে পড়ছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার গাছুরেরা।
গাছের বাকলে জন্মানো ছত্রাক থেকে তৈরি ভেষজ রংয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন তা কেজি দরে বিক্রি হয়। সংগ্রহের পর দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রাথমিকভাবে হয় ছত্রাকের বিশেষ প্রক্রিয়াকরণ। তারপর তা যায় পুরুলিয়ায়। সেখানে তৈরি হয় ভেষজ রং। বর্তমানে হাবড়ার বিভিন্ন জায়গায় গাছের ছত্রাক সংগ্রহ করতে দেখে স্থানীয়রা ভেবেছিলেন, গাছ কেটে নিচ্ছে। পরে বুঝলেন ছত্রাক সংগ্রহ করছেন গাছুরেরা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি ভেষজ রং পরিবেশের পক্ষে নিরাপদ। ফলে ক্ষতিকর রাসায়নিক রঙের বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে। ছত্রাক থেকে কি পদ্ধতিতে রং তৈরি হয়?
শিশু বা শিরীশ গাছের বাকলে বর্ষার পর যে ছত্রাক জন্মায় তা সাধারণত সাদা, ধূসর বা হালকা বাদামি রঙের। শীতের সকালে গাছের গায়ে ভেজা অবস্থায় থাকে। তখন ছুরি বা বাঁশের টুকরো দিয়ে সাবধানে তুলে নিতে হয়। যাতে গাছের কোনও ক্ষতি না হয় তা লক্ষ্য রাখতে হয় গাছুরেদের। সংগ্রহ করা ছত্রাক প্রথমে ছায়াযুক্ত জায়গায় তিন-চার দিন শুকোনোর নিয়ম। আর্দ্রতা শুকিয়ে যাওয়ার পর সংরক্ষণ করার যোগ্য হয়ে ওঠে। সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়ার পর ছত্রাক গুঁড়ো করতে হয়। গুঁড়ো পদার্থই রঙের মূল উপাদান। এর থেকে লাল, বাদামি, হলুদ রং তৈরি হয়। পোশাক থেকে হস্তশিল্প, প্রসাধনী সামগ্রী এবং চিকিৎসার কাজও ব্যবহার হয় এ রং। মহম্মদ মজাফফর নামে এক গাছুরে বলেন, ‘ছত্রাক সংগ্রহ করে শুকিয়ে সংরক্ষণ করে তৈরি হয় ভেযজ রং।’-নিজস্ব চিত্র