• বাগবাজারে সারি সারি বাসের আড়ালে নিবেদিতার জীবন নিয়ে তৈরি ম্যুরাল, মানুষ না দেখতে পেলে কী লাভ? প্রশ্ন নানা মহলে
    বর্তমান | ২৫ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাগবাজারে নিবেদিতা উদ্যান লাগোয়া দেওয়ালে নিবেদিতার জীবন‑কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে ম্যুরালের মাধ্যমে। বহু টাকা খরচ হয়েছে এর জন্য। চলতি বছরের মে মাসে রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে এই ম্যুরালের উদ্বোধন হয়। কিন্তু এই ক’দিনেই সিস্টার নিবেদিতার জীবন নিয়ে সেই সুদৃশ্য ম্যুরাল কার্যত ঢাকা পড়েছে! লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বাসরে পিছনে ঢেকে গিয়েছে সেই শিল্পকর্ম। পথচলতি মানুষ কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। 

    যাঁরা জানেন যে ওই জায়গায় ম্যুরাল রয়েছে, তাঁদেরও বাসের ভিড়ে রীতিমতো খুঁজে বেড়াতে হচ্ছে সেটি। সব মিলিয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালেই পড়ে থাকছে এমন একটি দ্রষ্টব্য। এলাকার মানুষের বক্তব্য, ‘যেখানে দীর্ঘদিন ধরে একটি বাসস্ট্যান্ড রয়েছে, সেখানে দেওয়ালজুড়ে এমনভাবে সাজানোর কোনও যৌক্তিকতা আছে কি? বাস দাঁড়িয়ে থাকলে যে ওই দেওয়াল কোনওভাবেই দেখা যাবে না, এ তো যে কারও মাথায় আসার কথা। তারপরও কেন এমন একটি সুন্দর কাজ এখানেই করা হল, তা রহস্য।’ এনিয়ে নানারকম তির্যক মন্তব্য বিনিময়ও চলছে এলাকায়। 

    সম্প্রতি ওই চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, দেখভালের অভাবে ওই চত্বর এবং সেখানকার রেলিং ঘেরা জায়গাটি রীতিমতো অপরিচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে। ধুলো‑বালি, মাকড়শার জালে ঢাকা পড়েছে বিভিন্ন ম্যুরাল। চারদিকে এলোমেলোভাবে পড়ে রয়েছে পলিব্যাগ, বোতল, নোংরা কাপড়চোপড়। আগাছার জঙ্গলও দেখা গেল। রেলিং থেকে ঝুলছে নানা কাপড়, গামছা। আর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে একের পর এক বাস। ওই এলাকাতেই রয়েছে রামকৃষ্ণদেব, মা সারদাদেবীর পদধূলিধন্য নানা ধর্মীয় স্থান। আছে নাট্যাচার্য  গিরিশ ঘোষের বাড়ি, যাত্রা মঞ্চ, নাট্য মঞ্চ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ নানা ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান। প্রতিদিনই বহু মানুষ এসব দ্রষ্টব্য স্থান পরিদর্শনে আসেন। বাগবাজারে ‘মায়ের বাড়ি’ যাওয়ার পথেও পড়ে এই নিবেদিতা উদ্যান। সবার জন্যই আগ্রহের হতে পারত এই ম্যুরাল। কিন্তু তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন। 

    ওই চত্বরে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল জনৈক প্রদীপ কর্মকারের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘যেখানে মানুষ এমন ভালো জিনিস দেখার সুযোগ পান না, সেখানে এমন কাজ কেন করা হলো, সেটাই আমাদের কাছে বড় আশ্চর্য  লাগছে।’ সন্ধ্যা দাশগুপ্ত নামে স্থানীয় এক গৃহবধূর কথায়, ‘সব সময় সেখানে বাস দাঁড়িয়ে থাকে। ম্যুর‌াল দেখার কোনও সুযোগই নেই সাধারণ মানুষের।’ স্থানীয় কাউন্সিলার বাপি ঘোষকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যাতে ওই ম্যুরাল দেখার সুযোগ পান, তার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। ইতিমধ্যে বাসের চালক, কন্ডাকটরদের বলা হয়েছে, তাঁরা যেন কিছুটা দূরত্ব বজা‌য় রেখে বাসগুলি দাঁড় করান। তাহলেই ম্যুর‌াল দেখা যাবে।’
  • Link to this news (বর্তমান)