• ‘১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হলেও গোলামির মানসিকতা যায়নি’, রাম মন্দির থেকে আর কী বার্তা মোদীর?
    এই সময় | ২৫ নভেম্বর ২০২৫
  • ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা মিললেও দাসত্বের মানসিকতা যায়নি বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুধু তাই নয়, এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দেশবাসীকে ১০ বছরের সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার অযোধ্যার রাম মন্দিরের ধ্বজা উত্তোলন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মোদী বলে দিলেন, ‘আগামী দশ বছরের মধ্যে এই গোলামির মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে।’ ইংরেজ শিক্ষাবিদ লর্ড ম্যাকলেকে তুলোধনা করার পাশাপাশি ধ্বজা উত্তোলন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শতাব্দী প্রাচীন ক্ষতের উপশম হলো বলেও জানিয়ে দেন তিনি।

    ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি রাম মন্দিরের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই দিনই রামলালার বিগ্রহে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়। কিন্তু মূল মন্দিরের কাজ তখনও চলছিল। গোটা চত্বরে এখন শিব, গণেশ, হনুমান, সূর্য, ভগবতী ও অন্নপূর্ণা মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সব মন্দিরের শীর্ষেই স্থাপন করা হয়েছে কলস ও ধ্বজাদণ্ড। সম্পূর্ণ নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় মন্দিরের চূড়ায় ধ্বজা উত্তোলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এটাই মন্দির সম্পূর্ণ হওয়ার প্রতীক। এ দিন মোদীর সঙ্গে রাম মন্দিরে উপস্থিত ছিলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও।

    রাম মন্দির উদ্বোধনের সময়ে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন মোদী। এ দিন ধ্বজা উত্তোলনের পরে রাম মন্দিরের সঙ্গে বিকশিত ভারতকে জুড়ে দিলেন তিনি। মোদীর কথায়, ‘শ্রীরামকে যেমন রাজা নিষাদ, শবরী, সুগ্রীব সাহায্য করেছিলেন, তেমনই দলিত, পিছিয়ে পড়া-সহ সমস্ত বর্গের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ে উঠে। আর রাম মন্দির হবে এই ভারতের মেরুদণ্ড।’ দেশবাসীকে নিজেদের অন্তরের রামকে জাগানোর পরামর্শ দেন মোদী। বলেন, ‘মনের মধ্যে যে শ্রীরাম অধিষ্ঠান করছেন, তাঁর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করুন।’

    এর পরেই মানসিক দাসত্বের প্রসঙ্গ টেনে আনেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘আমরা ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হয়েছি। কিন্তু গোলামির মানসিকতা এখনও যায়নি। এখনও আমরা ভাবি, বিদেশের সব ভালো। আর দেশের সব খারাপ। এই গোলামির মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে।’ এর জন্য ইংরেজ শিক্ষাবিদ লর্ড ম্যাকলেকে কাঠগড়ায় তোলেন তিনি।

    ম্যাকলে ছিলেন গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কয়ের আইন সচিব। ভারতে ১৮৩৫ সালে প্রাশ্চাত্যের অনুকরণে শিক্ষানীতি প্রবর্তন করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, ‘এই নীতিই দেশের কোমর ভেঙে দিয়েছে। রন্ধ্রে রন্ধ্রে জাঁকিয়ে বসেছে মানসিক গোলামি।’ সংবিধান, গণতন্ত্রও ভারতের নিজস্ব জিনিস, বিদেশ থেকে আসেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি। মোদী বলে দেন, ‘গণতন্ত্র আমাদের ডিএনএ-তে আছে।’

    ২০৩৫ সালে এই শিক্ষানীতির ২০০ বছর পূর্ণ হবে। তাই এই সময়ের মধ্যে গোলামির মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তিনি। মোদী বলেন, ‘আগমী ১০ বছরের মধ্যে এই মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে।’ এই প্রসঙ্গেই নৌবাহিনীতে সেন্ট জর্জ ক্রস থাকার উদাহরণও দেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘এটাই দাসত্বের মানসিকতা। আমরা সেই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসছি। বুঝিয়ে দিয়েছি, ভারত এখন নিজের পথে চলবে।’

    উল্লেখ্য, রাম মন্দিরের শীর্ষে স্থাপন করা ধ্বজাটি ১০ ফুট লম্বা, ২০ ফুট চওড়া। এর মাঝখানে রয়েছে স্বর্ণাভ সূর্যমুখী প্রতীক। সূর্যের মাঝে ‘ওঁ’ অক্ষর। পাশে পবিত্র কোবীদার বৃক্ষের ছবি। পতাকার ওজন ১১ কেজি। এই ধ্বজা সম্মান, সাহস, ঐক্য এবং সাংস্কৃতিক পরম্পরার বার্তা দেয়।

  • Link to this news (এই সময়)