হিদমার মৃত্যুতেই আন্দোলন শেষ! ‘আত্মসমর্পণ করব’, ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় চেয়ে চিঠি মাওবাদীদের
প্রতিদিন | ২৫ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘ কয়েক যুগের আন্দোলনে এবার সম্ভবত ইতি পড়তে চলেছে। মাওবাদী নেতা মাদভি হিদমা নিকেষের পরই কি আন্দোলন কার্যত সমাপ্তির পথে? সম্প্রতি তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে মাওবাদী সংগঠনের চিঠিতে অন্তত তেমই ইঙ্গিত। জানা গিয়েছে, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশ ? এই তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে মাওবাদী সংগঠন জানিয়েছেন, আগামী তিনমাসের মধ্যে তারা আত্মসমর্পণ করবে। সেই সুযোগ দিয়ে আপাতত জঙ্গলে যৌথবাহিনীর মাওবাদী অভিযান বন্ধ রাখা হোক। এরপরই জল্পনা তুঙ্গে, হিদমার মৃত্যুর পর যথাযোগ্য নেতৃত্বের অভাবেই হয়ত আন্দোলনে ইতি টেনে আত্মসমর্পণের পথে হাঁটতে চাইছে মাওবাদীরা।
মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশ সরকারের তরফে জানা গিয়েছে, তিন মুখ্যমন্ত্রী অর্থাৎ দেবেন্দ্র ফড়ণবীশ, বিষ্ণুদেও সাই ও মোহন যাদব সিপিআই (মাওবাদী)-এর স্পেশাল জোনাল কমিটির তরফে চিঠি পেয়েছেন। ২২ নভেম্বর অর্থাৎ গত শনিবারের তারিখ দেওয়া চিঠিতে স্বাক্ষর রয়েছে অনন্ত নামে সিপিআই (মাওবাদী)-এর স্পেশাল জোনাল কমিটির মুখপাত্রের। তাতে জানানো হয়েছে, ২০২৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাওবাদী দমনে সরকারি অভিযান স্থগিত রাখা হোক। ওই সময়ের মধ্যে তাঁরা অস্ত্র-সহ আত্মসমর্পণ করবে। চিঠিতে স্পষ্ট লেখা হয়েছে, ‘সরকারের পুনর্বাসন প্রকল্প গ্রহণ করতে রাজি আমরা। অস্ত্র ছেড়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে আগ্রহী। কিন্তু অনুরোধ, আমাদের একটু সময় দেওয়া হোক। দলের নীতি মেনে একসঙ্গে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সময় লাগবে। ততদিন (১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৬) পর্যন্ত এই তিন রাজ্যের জঙ্গলে জঙ্গলে মাওবাদী দমন অভিযান বন্ধ থাকুক।”
চিঠিতে মাওবাদী সংগঠনের মুখপাত্র আরও লিখেছে, ”এই সময়টা হয়তো দীর্ঘ, তবে কেন্দ্রীয় সরকার তো মাওবাদী মুক্ত করার ডেডলাইন স্থির করেছে ৩১ মার্চ, ২০২৬। তার মধ্যেই আমরা আত্মসমর্পণ করার লক্ষ্যে এগোচ্ছি। কথা দিচ্ছি, আমরা এবার আর PLGA (পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি) সপ্তাহ পালন করব না। কিন্তু ততদিন আমাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযান যাতে না হয়, তার অনুরোধ রইল। এমনকী গোপন সূত্রের ভিত্তিতেও জঙ্গলে কোনও অভিযান করা যাবে না। পাশাপাশি ইনফরমারদেরও তথ্য আদানপ্রদানের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।”
উল্লেখ্য, প্রতি বছর ডিসেম্বরের ২ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত মাওবাদীরা গেরিলা বিপ্লব সপ্তাহ হিসেবে পালন করে থাকে দেশজুড়ে। এ সময় মাওবাদী প্রভাবিত এলাকাগুলিতে তাদের সক্রিয়তা বাড়ে। তবে এবার তিন রাজ্যে আত্মসমর্পণের প্রাক শর্ত হিসেবে তারা ওই সপ্তাহ পালন করবে না বলেই জানিয়েছে। মাওবাদী সংগঠনের এই চিঠি কেন্দ্রের মাওবাদ-বিরোধী নীতির বড় সাফল্য হিসেবেই দেখা হচ্ছে। জল-জঙ্গল-মাটির অধিকার রক্ষার সাধু উদ্দেশে যে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল, কালে কালে তা গণবিরোধী হয়ে ওঠায় সমর্থন হারায়, শক্তিহীন হয়ে পড়ে। আর এবার তা কার্যত শেষ হতে চলেছে।