মেকলের ‘ষড়যন্ত্র’! রামমন্দির থেকে ২০০ বছর আগের ‘ব্রিটিশ ভূত’ দেখছেন প্রধানমন্ত্রী
প্রতিদিন | ২৫ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অযোধ্যার রামমন্দিরে (Ayodhya Ram Mandir) ‘ধর্মধ্বজ’ উত্তোলন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। ধ্বজারোহণের এই বিশেষ পর্বটি ছিল অত্যন্ত আবেগপূর্ণ। জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণে তিনি প্রতিটি ভারতীয়কে এই বিশেষ মুহূর্তটি স্মরণে রাখার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে তিনি দেশকে আত্মবিশ্বাস এবং স্ব-পরিচয়ে গর্বিত হওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে মেকলে-প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। তিনি মনে করিয়ে দেন যে, ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ মেকলে ভারতীয়দের মধ্যে যে দাসত্বের মানসিকতা তৈরি করতে চেয়েছিলেন, তার প্রভাব আজও আমাদের মধ্যে রয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, “আগামী ১০ বছরে আমাদের লক্ষ্য হল ভারতকে এই দাসত্বের মানসিকতা থেকে মুক্ত করা।” তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা স্বাধীনতা পেলেও হীনমন্যতা থেকে এখনও মুক্ত হতে পারিনি। তাই তো বিদেশি যা কিছু তা শ্রেষ্ঠ এবং ভারতীয় সব কিছু নিকৃষ্ট এমন একটা তুলনা আকছার কেউ কেউ প্রকাশ করেন। এমনকী, আমাদের সংবিধানকেও বিদেশি সংবিধান দ্বারা অনুপ্রাণিত এমনটা বলা হয়ে থাকে। এর প্রতিবাদ করে প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, “ভারত হল গণতন্ত্রের জননী। গণতন্ত্র আমাদের রক্তে, গণতন্ত্র আমাদের ডিএনএ-তে রয়েছে।”
ভারতের শিক্ষাব্যবস্থায় মেকলে ১৮৩৫ সালে যে ‘নিম্নগামী পরিস্রাবণ তত্ত্ব’ চালু করতে চেয়েছিলেন, তাতে তিনি এক শ্রেণির উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ভারতীয়কে ব্রিটিশ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তাদের মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন। আর এভাবেই ব্রিটিশের দাসত্বের বীজ প্রবেশ করাতে চেয়েছিলেন ভারতীয় রক্তে। কিন্তু ভারতবর্ষের নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এতটাও ঠুনকো নয় যে তা সহজে চোরাবালিতে মিশে যাবে! ইতিহাসের পাতা ওলটালে দেখা যাবে, ভারতের তামিলনাড়ুর উথিরামেরুর গ্রামে প্রায় ১,১০০ বছর আগে এক উন্নত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। চোল রাজা প্রথম পরান্তকের রাজত্বকালে (প্রায় ৯২০ খ্রিস্টাব্দে) এই গ্রামে ‘কুদাবোলাই প্রথা’ চালু ছিল। এই প্রথায় পাম পাতা বা তালপাতায় নাম লিখে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে গ্রামের বিভিন্ন কমিটিতে সদস্যদের নির্বাচন করা হত। তাই আদি থেকে যে মাটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত, সেই দেশকে গণতন্ত্রের পাঠ শেখাতে না আসাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে ব্রিটেন কিংবা আমেরিকার। এ দিনের ভাষণে কংগ্রেসকেও প্রধানমন্ত্রী এক হাত নেন। রাহুল গান্ধী আমেরিকায় গিয়ে গণতন্ত্র বাঁচানোর যে নাটক রচনা করেছিলেন, তা যে বাতুলতা মাত্র তা ইঙ্গিতে তিনি বুঝিয়ে দেন।
দেশ যেন বিদেশি প্রভাব থেকে বেরিয়ে এসে নিজের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস রেখে আত্মবিশ্বাসী হতে শেখে, সেকথাই এ দিন রামমন্দিরের পবিত্র ‘ধর্মধ্বজ’ উত্তোলনের অনুষ্ঠান থেকে সরাসরি বললেন মোদি।