রাজ্যজুড়ে এসআইআর প্রক্রিয়ার ডিজিটাইজেশন ধাপে নতুন করে ধরা পড়ছে চমকে দেওয়ার মতো একাধিক অসঙ্গতি। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০০২ সালে যে ভোটারের নাম ছিল তনিমা দে। ২০২৫ সালে সেই ভোটারই হয়ে যাচ্ছেন অরিন্দম দেব! আবার ইনিউমারেশন ফর্মে যে ভোটারের বাবার নাম অবিনাশ মুখার্জি। তাঁর ঠাকুর্দা বিপিন চ্যাটার্জি।
বিএলও অ্যাপের মাধ্যমে এমন অসংখ্য ফর্মই অনায়াসে আপলোড হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বুথ পর্যায়ে কাজ করা কর্মীরা। পদবি কিংবা আংশিক তথ্য দিলেও অ্যাপ সহজেই ফর্ম ‘লিঙ্ক’ করে দিচ্ছে। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রকৃত ভোটার কি না, তা যাচাই করার কোনও ব্যবস্থাই থাকছে না। আর এই কারণেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে এসআইআর-এর স্বচ্ছতা।
বিএলওদের অভিযোগ, ফর্ম স্ক্যান করে আপলোডের পর তাঁদের অ্যাপে কাজ করার সুযোগ থাকে মাত্র দু’টি অপশনে। প্রথম, যাঁদের ২০০২ সালের কোনও তথ্য নেই। দ্বিতীয়, যাঁদের ক্ষেত্রে ২০০২ সালের তথ্য ‘ইনপুট’ করে ডিজিটাইজেশন শেষ করতে হয়। এই দ্বিতীয় ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে গুরুতর সমস্যা। ফর্মে কেউ ২০০২ সালের কোনও বিধানসভা ক্ষেত্র, অংশ নম্বর ও ক্রমিক সংখ্যা লিখে দিলেই অ্যাপ তা সত্য ধরে নিচ্ছে। সেই তিনটি তথ্য মিলে গেলেই বাকি সব তথ্য অ্যাপে নিজে থেকেই উঠে আসছে। ফলে ফর্মে দেওয়া নাম, বাবার নাম, পদবি— কিছুই যাচাইয়ের সুযোগ পাচ্ছেন না বিএলও’রা।
অর্থাৎ কোনও ব্যক্তি ২০০২ সালের তালিকায় প্রকৃতপক্ষে না থাকলেও, তিনি যদি ওই তালিকার কারও বিধানসভা ক্ষেত্র, অংশ নম্বর, ক্রমিক সংখ্যা লিখে নিজেকে ‘আত্মীয়’ বলে দাবি করেন, অ্যাপ সহজেই সেই ফর্ম গ্রহণ করছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রকৃত পরিচয় যাচাই করার কোনও সিস্টেম নেই।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই সমস্যার মূলেই রয়েছে ম্যাপিং প্রক্রিয়া। অর্থাৎ বর্তমান তালিকার সঙ্গে ২০০২ সালের তালিকার তুলনা। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় কারও নাম থাকলে ম্যাপিং করে সেই তথ্য অ্যাপে আগে থেকেই বসানো হয়েছে। এখন যে কেউ তাঁর সঙ্গে আত্মীয়তার দাবি জানিয়ে ফর্ম পূরণ করলে অ্যাপ সেটাই গ্রহণ করছে।
ফলে উঠে আসছে বড় প্রশ্ন, এভাবে আদৌ কি স্বচ্ছ ভোটার তালিকা পুনর্গঠন করা সম্ভব? বিএলও কর্মীদের ক্ষোভ, ‘স্বচ্ছতা’ আনার দাবি করে যে অ্যাপ চালু হয়েছে, তা-ই এখন বিভ্রান্তি বাড়াচ্ছে।