• ‘বাংলাকে আঘাত করলে প্রত্যাঘাত করব, ভারতবর্ষ হেলিয়ে দেব’ মতুয়াগড় থেকে হুঙ্কার মমতার
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৬ নভেম্বর ২০২৫
  • মতুয়াগড় থেকে গর্জে উঠলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটার তালিকায় শুরু হয়েছে বিশেষ নিবিড় সংশোধন। আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই বাংলায় রাজনৈতিক উত্তাপের পারদ চড়তে শুরু করেছে। ৪ নভেম্বর এসআইআরের প্রতিবাদে কলকাতার রাজপথে  মিছিল করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ফের পথে নামলেন তৃণমূল নেত্রী। এদিন মতুয়াগড় হিসেবে পরিচিতি বনগাঁ থেকে বিজেপিকে তোপ দাগেন মমতা। বিজেপি এসআইআর করে বাংলার উপরে আঘাত হানার চেষ্টা করছে বলে তেতে ওঠেন তিনি। সেইসঙ্গে বাংলার কারও গায়ে কেউ হাত দিতে পারবে না বলেও আশ্বস্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘বাংলাকে আঘাত করলে প্রত্যাঘাত করব… ভারতবর্ষ হেলিয়ে দেব’ বলে বনগাঁ থেকে হুঙ্কার দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

    সভায় বক্তৃতা শুরু করেই তোপ দাগেন বিজেপিকে। তিনি বলেন, ‘আমার আসতে দেরি হল। আমি সাত-আট মাস হেলিকপ্টার ব্যবহার করি না। চুক্তি করে একটা হেলিকপ্টার নিয়েছে রাজ্য সরকার। সকালে বলল যাবে না। বেরোনোর কথা ছিল ১২টায়। সভা ছিল সাড়ে ১২টায়। নির্বাচন শুরু হল না, সংঘাত শুরু হয়ে গেল।‘ তার পরেই গেরুয়া শিবিরকে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিজেপিকে বলি, ওরে আমার সঙ্গে খেলতে যাস না। আমি যেটা খেলব, তাতে আমার নাগাল পাবে না, ধরতেও পারবে না।‘

    প্রশাসনিক সূত্রে খবর, হেলিকপ্টারে মুখ্যমন্ত্রীর বনগাঁ যাওয়ার কথা ছিল।  কপ্টারে লাইসেন্স সংক্রান্ত একটি সমস্যা দেখা দেয়। সেই পরিস্থিতিতে সড়কপথেই বনগাঁ রওনা দেন মমতা। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, গত ছ’মাস মুখ্যমন্ত্রী ওই কপ্টার ব্যবহার করেননি। কপ্টারটির উড়ান সংক্রান্ত লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। নিয়ম মোতাবেক, মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগের দিন, সোমবার কপ্টারটি মহড়াও দেয়। সেই সময়ও লাইসেন্সের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি বলে ওই সূত্রের দাবি। মঙ্গলবার উড়ান সংস্থার তরফে বিষয়টি জানানো হয়। নবান্ন সূত্রে খবর, বিষয়টিকে ‘খুব সহজ’ ভাবে দেখা হচ্ছে না।

    এজেন্সি লেলিয়ে সাধারণ মানুষকে টাকা দিয়ে বিজেপি ভোট জিততে পারবে না বলেও এদিন তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি এসআইআর-এর নামে এনআরসির চক্রান্ত করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিজেপিকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমরা সব জানি। এসআইআর-এর নামে আসলে এনআরসি  করার চক্রান্ত চলছে। আমি থাকতে বাংলার মানুষের গায়ে হাত দিতে দেব না।’ বিজেপির পাশাপাশি এদিন নির্বাচন কমিশনকেও এক হাত নেন মমতা। তাঁর সাফ কথা, ‘নির্বাচন কমিশনের কাজ হল, ভোট পরিচালনা করা। এখনও ৪ মাস বাকি। বাংলাকে কব্জা করার চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপির অফিস থেকে তালিকা ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে।’

    বনগাঁর সভা থেকে বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকেও এদিন নিশানা করেন মমতা। নাম না করেন এদিন নাগরিকত্ব দেওয়ার নামে ধর্মীয় কার্ড দিয়ে প্রতারণা করার প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। সংঘের কার্ডেই বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি সতর্ক করে দেন। টাকার বিনিময়ে মহাসংঘ থেকে দেওয়া কার্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন, ১০০ টাকার বিনিময়ে পাওয়া মতুয়া কার্ড দিয়ে বলা হচ্ছে, এটা দেখালেই ভোটার তালিকায় নাম উঠবে। তাঁর প্রশ্ন, ‘ইলেকশন কমিশন কি এই কথা বলেছে? আগে কথাটা লিখতে বলুন। প্রতারণা করছে আপনাদের সঙ্গে।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০০২ সালের তালিকা ধরে এসআইআর হচ্ছে, কার্ড পাচ্ছেন ২০২৫ সালের নভেম্বর, ডিসেম্বর মাসে। যেখানে আপনাকে বাংলাদেশি বলা হচ্ছে।‘

    বেশ কিছু দিন ধরেই ঠাকুরবাড়ি থেকে মতুয়াদের সিএএ কার্ড দেওয়া হচ্ছে। শিবির করে তা দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। তা নিয়ে ঠাকুরবাড়িতে বিবাদও হয়েছে। সেই কার্ডেই মতুয়াদের বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে গর্জে উঠেন মমতা। তিনি বলেন, ‘বড়মা যখন অসুস্থ ছিলেন তখন কোথায় ছিলেন। একবার নয়। ৬ বার নার্সিংহোমে ভর্তি করিয়েছি। বালু আমাকে খবর দিতেন। বালু মানে জ্যোতিপ্রিয়। ঠাকুরবাড়ির উন্নয়ন আমরাই করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় করেছি।‘  বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী বিদেশে রয়েছেন. তা নিয়েও বেঁধেন মমতা।

    বাংলা ভাষা বলার অপরাধে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাভাষীদের হেনস্থা করা হচ্ছে বলে এদিন মতুয়াগড় ঠাকুরনগর থেকে সরব হন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘বীরভূমে জন্মেছি, না হলে আমাকেও বাংলাদেশি বলে দিত!’ এই বলে  বিজেপিকে তোপ তৃণমূল সুপ্রিমোর।  এই ইস্যুতে একাধিকবার সরব হয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। এসআইআর আবহে ফের একবার বাংলা এবং বাঙালির ভাবাবেগে শান দিলেন বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। মঙ্গলবারের সভা থেকে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘বাংলা ভাষায় কথা বললেই বাংলাদেশি? ‘ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে ভালোবাসি। কারণ আমাদের ভাষা এক। যাঁরা বাংলাদেশি, তাঁরা বাংলায় কথা বলে অভ্যস্ত, হঠাৎ কী করে বদলাবে?’ প্রশ্ন প্রশাসনিক প্রধানের।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)