অর্কদীপ্ত মুখোপাধ্যায়: ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় অসংগৃহীত ফর্ম নিয়ে তোলপাড় সারা রাজ্যে। অনেকের ধারণা ছিল আজ মানে ২৫ নভেম্বর এনুমারেশন ফর্ম জমা দেওয়ার শেষ দিন। কিন্তু কমিশন স্পষ্ট করেঠে আজ নয়, ৪ঠা ডিসেম্বর ফর্ম সংগ্রহ করার শেষ দিন।
ভোটার তালিকা সংশোধনের (Electoral Roll Revision) প্রক্রিয়ায় প্রায় ২০ লক্ষ 'আনকালেক্টেবল ফর্ম' বা অসংগৃহীত ফর্মের বিষয়টি সামনে এসেছে। অর্থাৎ, এই ফর্মগুলির মাধ্যমে ভোটারদের তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
SIR-এর কাজ করতে গিয়ে একই সঙ্গে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে পড়েছেন বিএলও-রা (BLO)। কেউ বলছেন ২৫ তারিখের (২৫ নভেম্বর) মধ্যেই কাজ শেষ করার (SIR Form fill up last date) নির্দেশ দিয়েছে কমিশন, কেউ অভিযোগ করছেন ২৮ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে জানানো হয়েছে। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে (Election Commission)।
তবে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক (CEO) দফতর স্পষ্ট করে জানিয়েছে, SIR-এর কাজের জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। পুরো পর্বের দিনক্ষণ ও নির্ঘন্ট প্রথম থেকেই ঠিক করে দেওয়া হয়েছে, তার কোনও বদল এখনও করা হয়নি।
মনোজ আগরওয়াল রাজ্যের নির্বাচন কমিশনের CEO- তাঁর মতে ফর্ম বিলি করে সেই ফর্ম কালেক্ট করার পর ডিজিটাইজ করতে হচ্ছে। সেই প্রক্রিয়া হয়ে গেলে ফর্মগুলো নিয়ে আমাদের খসড়া তালিকা তৈরি করতে হবে। এর পাশাপাশি যে ফর্মগুলো আনকালেক্টবল থাকবে, আলাদা করে তারও তালিকা তৈরি করে সেগুলো প্রতিটা বুথ, পৌরসভা, পঞ্চায়েত, বিডিও-র ওয়েবসাইট, ইআরও-র ওয়েবসাইট এবং ডিইও-র ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, 'এই কারণেই আমরা বলেছি যে সাধারণ মানুষ যদি তাড়াতাড়ি ফর্ম ফিলাপ করে জমা দেওয়ার কাজে সাহায্য করেন, তাহলে আমাদের বিএলও-রা ডিজিটাইজেশনের জন্য বেশি সময় পাবে'।
সিইও আরও বলেন, 'আমার কাছে বেশকিছু রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও জানতে চাওয়া হয়েছিল যে তারিখ পরিবর্তন করে ২৫ বা ২৮ তারিখ করা হয়েছে কি না। আমি তাঁদেরও জানিয়েছি তারিখ প্রথম দিন যেমন ৪ ডিসেম্বর ছিল আজকেও ৪ ডিসেম্বরই আছে।'
এই বিপুল সংখ্যক ফর্ম মূলত চারটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেখানে ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য যাচাই করা হচ্ছে:
Death (মৃত্যু): যে ভোটাররা মারা গেছেন।
Untraceable (অসনাক্ত): ঠিকানায় গিয়েও যাঁদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Shifted (স্থানান্তরিত): যাঁরা অন্য জায়গায় চলে গেছেন।
Duplicate (ডুপ্লিকেট): একই ভোটারের নাম একাধিকবার তালিকায় রয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
এইসব ভোটারদের নামগুলি এখনও ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। সূত্র অনুযায়ী, এই 'আনকালেক্টেবল' নামের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
আগামী ৪ঠা ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সংক্রান্ত কাজ করার সময় আছে। আগামী ৯ই ডিসেম্বর প্রকাশিত খসড়া তালিকায় (Draft List) এই চারটি ক্যাটেগরিতে থাকা ভোটারদের নাম আর থাকবে না।
শুধুমাত্র কলকাতা শহরেই প্রায় ১ লক্ষের কাছাকাছি ডাবল এন্ট্রি (duplicate entry) রয়েছে।
২০০২ সালের নথি যৌনকর্মীদের পক্ষে জোগাড় করা কার্যত অসম্ভব। যাঁরা পরিবারের কাছে তাঁদের পেশা গোপন করে রেখেছেন সামাজিক বেড়াজালের কারণে সেই অংশের পক্ষেও পরিবারের নথি জোগাড় করা সম্ভব নয়। কথা হচ্ছে যৌনকর্মীদের (Sex Workers) নিয়ে। এশিয়ার বৃহত্তম যৌনপল্লি সোনাগাছিতে (Sonagachi) এসআইআর (SIR West Bengal) আতঙ্ক নিয়ে এসআইআর আবহে কম প্রশ্ন ওঠেনি। ভোটার কার্ডে বিশেষ নিবিড় সংশোধন শুরুর ১৭ দিনের মাথায় যৌনকর্মীদের কথা মাথায় রেখে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়ালকে চিঠি লিখে সমাধানের আর্জিও জানায় তিন সংগঠন।
চারিদিক থেকে এ নিয়ে চর্চা শুরু হতেই নড়েচড়ে বসল নির্বাচন কমিশন। সূত্রের খবর, রাজ্যের সিইও দফতর যৌনকর্মীদের জন্য একটি স্পেশ্যাল ক্যাম্প করতে চলেছে সোনাগাছি এলাকায়। যেখানে কমিশনের আধিকারিক হিসেবে ইআরও স্বয়ং উপস্থিত থাকবেন। তিনি ক্যাম্পে বসে শুনবেন কাদের এহেন সমস্যা রয়েছে। সব কিছু বিচার-বিবেচনা করে যাতে তাঁদের ভোটার কার্ড হয়ে যায়, কমিশনের সঙ্গে কথা বলে তিনিই সেই সিদ্ধান্ত নেবেন।
কমিশন জানিয়েছে যে, ভয় নেই সোনাগাছির যৌনকর্মীদের, বিশেষ ক্যাম্প করে হিয়ারিঙের ব্যবস্থায় থাকতে পারেন রাজ্যের সিইও। এমন কি, প্রয়োজনে রাজ্যের সিইও সশরীরে সেই বিশেষ ক্যাম্পে উপস্থিত থাকবেন।