প্রায় ৭ দশক পর বাংলার জঙ্গলে দেখা মিলল লুপ্তপ্রায় কস্তুরী মৃগের, সতর্ক বনদপ্তর
প্রতিদিন | ২৬ নভেম্বর ২০২৫
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: শেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৫৫ সালে! অস্তিত্ব নিয়ে একাধিক সময় প্রশ্ন উঠেছিল। অবশেষে মিলল দেখা! নেওড়াভ্যালি জাতীয় উদ্যানে বন দপ্তরের বসানো গোপন ক্যামেরায় ধরা দিল কস্তুরী মৃগ অর্থাৎ মাস্ক ডিয়ার। একেবারেই বিরল প্রজাতির এটি। দীর্ঘ সাত দশক পর ফের পাহাড়ে কস্তুরী মৃগের ছবি ক্যামেরা বন্দি হতেই উচ্ছ্বসিত বন দপ্তরের আধিকারিক থেকে কর্মীরা। রাজ্যের জঙ্গলে বিপন্ন প্রজাতির এই হরিণের খোঁজ মেলায় নতুন করে আশার আলো তৈরি হয়েছে বলেই জানাচ্ছেন বন আধিকারিকরা।
উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) ভাস্কর জেভি জানিয়েছেন , “ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার সমীক্ষায় সম্প্রতি নেওড়াভ্যালির জঙ্গলে মাস্ক ডিয়ার অর্থাৎ কস্তুরী মৃগের সন্ধান মিলেছে। জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ৫০ ফাদ ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ওই ক্যামেরায় বিপন্ন কস্তুরী মৃগের ছবি দেখা গিয়েছে। ওই তথ্য মিলতে জঙ্গলে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।” তবে এই বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন বন আধিকারিকরা। বিশেষ করে কোন প্রজাতির মৃগ সেটি, কত গুলি এখনও রয়েছে এই বিষয়ে আরও তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানাচ্ছেন আধিকারিকরা।
তথ্য বলছে, ১৯৫৫ সালে শেষবার দার্জিলিংয়ের সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানে কস্তুরী মৃগের দেখা মিলেছিল। এরপর বহুবার এই হরিণের অস্তিত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বনদপ্তর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ১১২ মিটার উঁচু নেওড়াভ্যালি জাতীয় উদ্যানের জঙ্গলে ২০২৩-২০২৪ সালে রেড পান্ডাশুমারির জন্য সমীক্ষা চালায় ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া। ওই কাজের জন্য ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর বসানো ফাদ ক্যামেরায় মাস্ক ডিয়ারের ছবি ধরা পড়ে। সমীক্ষা শেষে ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখতে গিয়ে কার্যত অবাক হয়ে যান বন আধিকারিকরা। দেখা যায়, নেওড়াভ্যালির জঙ্গলে ফাদ পাতা ক্যামেরায় কস্তুরী মৃগের উপস্থিতির প্রমাণ রয়েছে।
প্রসঙ্গত কস্তুরী হল পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সুগন্ধী। সেটা পুরুষ মাস্ক ডিয়ারের নাভিতে বিশেষ ধরনের গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হয়। কস্তুরীর গন্ধ তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী। পুরুষ কস্তুরী মৃগের বয়স দশ বছর হলেই নাভির গ্রন্থি থেকে কস্তুরী তৈরি হয়। ফলে চোরাশিকারিদের সবসময়ে নজরে থাকে বিরল প্রজাতির এই হরিণ। অন্যদিকে দার্জিলিংয়ের নেওড়াভ্যালি ছাড়াও, দেশের অরুণাচল প্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, সিকিম এবং উত্তরাখণ্ডের জঙ্গলে কস্তুরী মৃগের দেখা মেলে।