দু’হাজার মিটিয়ে ২০ হাজার দাবি, ঘনিষ্ঠতার ‘মূল্য’ দিতে না চাওয়ায় আদর্শকে খুন কোমল-ধ্রুবর?
প্রতিদিন | ২৬ নভেম্বর ২০২৫
অর্ণব আইচ: ডেটিং অ্যাপে ‘ঘনিষ্ঠতা’র দর উঠেছিল দু’হাজার টাকা। কিন্তু পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আদর্শ লোসালকার কাছ থেকে অন্তত কুড়ি হাজার টাকা হাতানোর ছক কষেছিল ‘খুনি যুগল’। তাই আদর্শের গলায় বেডশিট জড়িয়ে তাঁকে খুন করে কোমল সাহা ও তার লিভ ইন পার্টনার ধ্রুব মিত্র। আদর্শের সঙ্গে ওই যুগলের ধস্তাধ্বস্তি হওয়ার সময় তিনি বাধা দেন। ধ্রুবর হাতে আদর্শের নখের আঁচড়ের চিহ্নও মিলেছে। গত শুক্রবার রাত সাড়ে এগারোটা থেকে বারোটা পর্যন্ত আদর্শ, কোমল ও ধ্রুব, তিনজনই একসঙ্গে ছিলেন। ফলে ওই সময়ে কী ঘটেছিল, তার উপর পুলিশ গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ, রাত ১২টা নাগাদই খুন হন আদর্শ। এদিকে, ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে ভিনরাজ্যের একাধিক বাসিন্দার কাছ থেকে অভিযুক্ত যুগল টাকা হাতিয়েছে বলে অভিযোগ পুলিশের।
গত শনিবার দক্ষিণ কলকাতার কসবার একটি হোটেল থেকে উদ্ধার হয় আদর্শ লোসালকার বিবস্ত্র দেহ। এই খুনের ঘটনায় কোমল ও ধ্রুবকে গ্রেপ্তার করার পর থেকে বয়ান পালটাচ্ছে তারা। তাদের দাবি, তারা অনলাইনে আদর্শকে কুড়ি হাজার টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিতেই তিনি বাধা দেন। এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে কসবা থানায় কখনও আলাদাভাবে, কখনও বা মুখোমুখি তাদের জেরা করা হচ্ছে। তাদের ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্গঠনও করা হচ্ছে।
ধৃত যুগল পুলিশকে জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ডেটিং অ্যাপে কোমল আদর্শের কাছ থেকে দু’হাজার টাকা ঘনিষ্ঠতার জন্য দাবি করে। কোমলদের দাবি, সেই টাকাও আদর্শ তাদের দেননি। তবে অনলাইনেই কসবার হোটেলে দু’টি ঘর ভাড়া নেন আদর্শ। প্রথমে কোমল ও ধ্রুব একসঙ্গে একটি ঘরে ঢোকে। এর পর মিনিট দশেকের জন্য কোমল আদর্শের ঘরে যাওয়ার পরই হোটেলকর্মী কয়েকটি বিয়ারের বোতল নিয়ে আসেন। খাবার সরবরাহকারী অ্যাপে আদর্শ বিয়ারের অর্ডার দিয়েছিলেন। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গিয়েছে, আদর্শ নিজেই বাইরে বেরিয়ে চিপস নিয়ে ঘরে ঢোকেন। এর কিছুক্ষণ পর কোমল ও ধ্রুবকে করিডর তথা বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরেই কথা বলতে দেখা যায়। পুলিশের মতে, ওই সময়ই দু’জন আদর্শের কাছ থেকে অনলাইনে লুঠপাটের ছক কষে। এর পর কোমল আদর্শের ঘরে চলে যায়।
পুলিশ জেনেছে, আদর্শ আগে থেকেই বিয়ার খাচ্ছিলেন। আদর্শ কোমলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জন্য তৈরি হন। বিবস্ত্র আদর্শকে কোমল আরও মদ্যপান করার জন্য উৎসাহিত করে। অতিরিক্ত মদ্যপান করে ঝিমিয়ে পড়েন আদর্শ। তখনই কোমল পাশের ঘর থেকে ধ্রুবকে ডেকে পাঠায়। তাদের দাবি, পাওনা টাকা না পেয়ে দু’জন মিলে আদর্শর পকেট থেকে হাজার দেড়েক টাকা লুঠ করে। ওই সময়ই আদর্শ জেগে ওঠেন। ঘরে ধ্রুবকে দেখে হতবাক হয়ে যান। ধ্রুব তাঁকে বলে, অনলাইনে তাদের কুড়ি হাজার টাকা দিতে। কিন্তু আদর্শ টাকা বা অনলাইনের পিন নম্বর কিছুই দিতে রাজি হননি। উলটে কোমলকে গালিগালাজ করতে শুরু করেন। এর পরই ধ্রুব ঘুসিতে আদর্শের নাক ফাটিয়ে দেন। আদর্শ পালটা পদাঘাত করে বাধা দেন। তখন দু’জন মিলেই তোয়ালে দিয়ে তাঁর পা বেঁধে ফেলেন। তাঁর গলা টিপে ধরা হয়। তখন আদর্শ বাধা দেওয়ার সময় ধ্রুবর হাতে তাঁর নখের আঁচড় লাগে। এর পর ওই অবস্থায় তাঁকে বিছানা থেকে মেঝেয় ফেলে দেওয়া হয়। এর পরই যুগল বিছানা থেকে বেডশিট খুলে ফেলে। গলায় বেডশিটের ফাঁস দিয়ে আদর্শকে খুন করে কোমল ও ধ্রুব। এর পর সিসিটিভির ফুটেজে করিডর দিয়ে তাদের দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যায়। রাত আড়াইটে নাগাদ আদর্শের রুম থেকে কোমল ও ধ্রুবকে বেরিয়ে পাশের রুমে যেতে দেখা যায়। এর পর কোমল নিজের ব্যাগ নিয়ে ধ্রুবর সঙ্গে বেরিয়ে একতলায় চলে যায়। তাদের হোটেল থেকে বের হয়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।