সংসদে নিষিদ্ধ ‘জয় হিন্দ’, ‘বন্দেমাতরম’! শীতকালীন অধিবেশনের আগে গেরুয়া ফতোয়া
বর্তমান | ২৬ নভেম্বর ২০২৫
সন্দীপ স্বর্ণকার, নয়াদিল্লি: ৭ নভেম্বরই মোদি সরকার ঘটা করে পালন করেছে ‘বন্দেমাতরমে’র সার্ধশতবর্ষ। অথচ, সেই ‘বন্দেমাতরম’ই এবার উচ্চারণ করা যাবে না সংসদে! শুধু কি কৃতী বাঙালি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা আনন্দমঠের বন্দেমাতরম? না। আরও এক বাঙালির গর্ব নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আগুন ধরানো স্লোগান ‘জয় হিন্দ’ও ব্রাত্য সংসদে। আগামী সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। আজ ২৬ নভেম্বর ভারতের সংবিধান দিবসও। আর তার আগেই জনপ্রতিনিধিদের জন্য এল কেন্দ্রের ‘ফতোয়া!’
রীতিমতো বুলেটিন প্রকাশ করে রাজ্যসভার সচিবালয় জানিয়ে দিয়েছে, সংসদে দেওয়া যাবে না জয় হিন্দ বা বন্দেমাতরম স্লোগান। এটি শালীনতা (ডেকোরাম) বিরুদ্ধ। সংসদীয় কার্যপ্রণালীর মতো গম্ভীর (সিরিয়াসনেস) বিষয়ের বিরোধী। আসন্ন অধিবেশনেই প্রথমবার সভা পরিচালনা করতে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসবেন দেশের নতুন উপরাষ্ট্রপতি সি পি রাধাকৃষ্ণান। সভায় তিনিই শেষ কথা বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বুলেটিনে।
তবে ওয়াকিবহাল মহলে প্রশ্ন উঠছে, ব্রিটিশের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে ১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট যে বন্দেমাতরম প্রথম রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে আম ভারতীয়ের রক্ত গরম করে দিয়েছিল, যে বন্দেমাতরম ধ্বনিতে হাজারো স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছেন, সেই বন্দেমাতরমই শালীনতা বিরোধী? সংবিধান সভাতেও ১৯৫০ সালে বন্দেমাতরমকে গ্রহণ করা হয়েছিল ‘জাতীয় গীত’ হিসেবে। তাই প্রশ্ন, সরকার তথা সংসদ সচিবালয় কি এও ভুলে গিয়েছে যে, সংসদের অধিবেশনের সমাপ্তিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতুবির (সাইন-আ-ডাই) সময় নেপথ্যে বেজে ওঠে বন্দেমাতরমই?
স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি ১২ বছর ধরে ভাষণ শেষে স্লোগান দিয়েছেন, ‘জয় হিন্দ’, ‘বন্দেমাতরম’। তাহলে প্রধানমন্ত্রীর তোলা স্লোগান কি শালীনতা নষ্ট করে? নাকি ক্ষুণ্ণ হয় অনুষ্ঠান তথা প্রতিষ্ঠানের গাম্ভীর্য? যে কোনও সরকারি অনুষ্ঠানে মন্ত্রীরাও বক্তৃতা শেষে বলেন, জয় হিন্দ। এটাই রীতি। ফলে শীতকালীন অধিবেশন শুরুর আগে সেই দুই জনপ্রিয় এবং ভারত-ভারতীয়দের সঙ্গে আবেগের সঙ্গে জড়িত স্লোগান নিষিদ্ধ করার মতো ফতোয়ায় উঠছে প্রশ্ন। যদিও রাজ্যসভা সচিবলায়ের বক্তব্য, গান হিসেবে কেউ নিষিদ্ধ করেনি। কিন্তু স্লোগান হিসেবে তা ব্যবহার করা যাবে না। বলা যাবে না, থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্কস জাতীয় শব্দও।
স্লোগান-সাবধানতার পাশাপাশি সাংসদদের জন্য আরও নির্দেশ, সংসদ কক্ষে তো বটেই, গোটা চত্বরেই কোনও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন চলবে না। সংসদে কোনও বক্তব্য রাখার সময় কারও নামে অভিযোগ করলে, সেই সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ দিতে হবে। এবং সেই তথ্যের সত্যতা সংশ্লিষ্ট সাংসদকে ‘অথেনটিকেট’ করাতে হবে। সভার অন্দরে হোক বা বাইরে, লোকসভার স্পিকার বা রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের নির্দেশের কোনও সমালোচনা করা যাবে না। ফলে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরুর আগে সাংসদের জন্য লক্ষ্মণরেখা টেনে দেওয়া হল। এও কি বিরোধী মতের কণ্ঠরোধ নয়? প্রশ্ন কিন্তু উঠছে।