সংবাদদাতা, কান্দি: ভরতপুরের সিজগ্রামে তিনদিন ধরে নিখোঁজ ছিল দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী। অবশেষে মঙ্গলবার সাতসকালে বাড়ি থেকে কয়েকশো মিটার দূরে ধানজমি থেকে আটবছরের মেয়েটির রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হল। অথচ দু’দিন আগেও সেখানে পুলিশ ও স্থানীয়রা তন্নতন্ন করে খোঁজ করেছিলেন। তখন কিন্তু ওই জমিতে কোনও দেহ ছিল না। তাই গ্রামবাসীদের অনুমান, সোমবার রাতেই ওই বালিকাকে খুন করা হয়েছে। যেখানে দেহ উদ্ধার হয়েছে, সেই জায়গায় তাজা রক্তের ছাপও মিলেছে। ওই বালিকার বাবা-মা এখন শোকে পাথর। একরত্তি বালিকাকে খুনে যারা জড়িত আছে, তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি তুলেছেন গ্রামবাসীরা। কান্দির এসডিপিও শাশ্রেক আম্বারদার বলেন, আমরা তদন্ত করছি। দোষীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
এদিন সাতসকালেই এক চাষি ধানের আঁটি বাঁধতে শ্রমিকদের নিয়ে জমিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু জমির এক জায়গায় কিছু ধানের আঁটি ঢিবি করে রাখা দেখে তাঁদের সন্দেহ হয়। এক শ্রমিক কাছে গিয়ে দেখতে পান, ধানের আঁটি থেকে দু’টি পা বেরিয়ে এসেছে। খবর রটে যেতেই গ্রামবাসীরা সেখানে ভিড় করেন। ভরতপুর থানার পুলিশও এলাকায় পৌঁছয়। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। ওই জমির মালিক বলেন, মৃতদেহ দেখেই ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গিয়েছিলাম। ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হয়ে থাকল আমার জমি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধানের আঁটি সরাতেই বালিকার রক্তাক্ত দেহ বেরিয়ে আসে। মেয়েটির গলায় তার নিজের ওড়নাই পেঁচানো ছিল। পায়ের জুতো কিছুটা দূরে পড়ে ছিল। হাতে ছিল আঁচড়ের দাগ। নাক থেকে রক্ত বের হওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ দেখা যায়। মাটিতে টাটকা রক্তের ছাপও দেখেছেন তাঁরা।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, সোমবার রাতেই খুন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। রক্তের ছাপ দেখে আমাদের ধারণা, হয়তো এখানে আনার পরই খুন করা হয়েছে। অর্থাৎ ওইদিন রাত অবধিও সে বেঁচে ছিল। ওই বালিকাকে যে গ্রামেই কোথাও আটকে রাখা হয়েছে, দু’দিন ধরেই তেমন সন্দেহ করছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। কারণ গ্রামে বহু সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখার পরও ওই বালিকার গতিবিধি জানা যায়নি। শনিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে ওই ছাত্রী নিখোঁজ হয়েছিল। পুলিশ ও স্থানীয়রা দু’দিন ধরে লাগাতার তল্লাশি চালান। গ্রামের বড় জলাশয়, জঙ্গল, ধানজমি-সর্বত্র তল্লাশি চালানো হয়। স্নিফার ডগ এনে, ড্রোন উড়িয়েও খোঁজ চলে। সোমবার রাতে পুলিশ ওই বালিকার মাকে থানায় এনে জেরাও করেছিল। কিন্তু বালিকার সন্ধান মেলেনি। মঙ্গলবার দেহ উদ্ধারের পর পুলিশ ফের স্নিফার ডগ নিয়ে এসে তল্লাশি শুর করে। স্নিফার ডগ একটি পুকুরের পাশ দিয়ে মাঠের দিকে গিয়েছে। কিন্তু খুনীকে শনাক্ত করতে পারা যায়নি। মেয়ের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধারের পর বাড়িতেই নিশ্চুপ হয়ে বসে রয়েছেন মা। মেয়েটির বাবা শুধু বলেন, যারা আমার মেয়েকে খুন করল-তাদের ফাঁসির সাজা চাই। গ্রামের বেশিরভাগ পুরুষ-মহিলা, পঞ্চায়েত সদস্যরাও তাঁর সঙ্গে একমত। তাড়াতাড়ি দোষীদের গ্রেফতার করুক পুলিশ-এমনটাই চাইছেন তাঁরা।
মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের ভরতপুর থানা এলাকায় এই ধানের জমি থেকেই ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয়।-নিজস্ব চিত্র