নিজস্ব প্রতিনিধি, মেমারি: হেমন্তের বিকেলে সূর্যের নরম আলো আমগাছের বন ভেদ করে মাটিতে এসে পড়ছে। আর কিছুক্ষণ পরই এখানে শুরু হবে যুদ্ধ। ধারালো ছুরি তৈরি করে রাখা রয়েছে। রোদে তা চকচক করছে। মাঠের বাইরে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়। তাঁরা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ উপভোগ করবেন। মাটি যখন রক্তস্নাত হবে, তখন করতালির ঝড় উঠবে। মাঝ মাঠে এল ‘হাসিনা’ ও ‘ইউনুস’। কিছুটা দূরে রয়েছে ‘ট্রাম্প’ আর ‘বাইডেন’। দামামা বেজে উঠলেই যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। যুদ্ধ ততক্ষণ চলবে, যতক্ষণ না তাদের একজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
প্রতীক্ষার অবসান হল। শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তেও রাজি নয়। যত সময় গড়াচ্ছে ততই দু’পক্ষ সর্বশক্তি দিয়ে একে অপরকে হারানোর চেষ্টা করছে। রক্ত গড়াচ্ছে, কিন্তু যুদ্ধ থামছে না। তা একটানা চলতেই থাকল। আসলে এই যুদ্ধের ভূমিকায় কোনও রাষ্ট্রনায়ক অবতীর্ণ হননি। এটা আসলে মোরগ লড়াই। যে যারা মতো করে নিজের পোষ্যদের নাম দেয়। মেমারির বেলুট গ্রামের আমবাগানে সেই ‘যুদ্ধ’ বেধেছিল। স্থানীয়রা বলেন, শীতের সময় এই লড়াই হয়। বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা মোরগ নিয়ে হাজির হন আমবাগানে। মোরগের পায়ে বেঁধে দেওয়া হয় ধারালো ছুরি। লড়াই করতে করতে যতক্ষণ না একটা মোরগ মারা যায়, ততক্ষণ লড়াই চলতে থাকে। দলুইবাজার পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা বিকাশ সোরেন বলেন, শীতের সময় নির্দিষ্ট দিন দেখে যুদ্ধের আয়োজন করা হয়। তার জন্য অনেকে সারা বছর ধরে প্রস্তুতি নেয়। এক বছর ধরে মোরগ পালন করা হয়। এই যুদ্ধ ‘প্রেস্টিজ ইশ্যু’। যার মোরগ হেরে যায়, সে মন খারাপ করে বাড়ি ফেরে। আর যে জেতে, তার নাম চারদিকে ছড়িয়ে যায়। খোকন দাস নামে আর এক বাসিন্দা বলেন, ১৫-২০টি গ্রামের বাসিন্দারা মোরগ লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করেন। বছরে একবারই এই গ্রামে লড়াইয়ের আয়োজন করা হয়। এলাকার বাসিন্দারা বলেন, নৃশংস এই খেলা অনেকেই উপভোগ করেন। রক্ত দেখার পরও তাঁদের কোনও হেলদোল থাকে না। বহু বছর ধরেই এই খেলার প্রচলন রয়েছে। পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ার মতো জেলাগুলিতে এই খেলা বা লড়াইয়ের চল বেশি। তবে, পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ও মেমারির বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা এই খেলা বহুদিন ধরে দেখে আসছেন।
মঙ্গলবার পাল্লা ক্যাম্প যাওয়ার রাস্তার পাশেই বসেছিল এই খেলা। দুপুর থেকে অনেকেই সেখানে মোরগ নিয়ে হাজির হন। সূর্য অস্ত যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে শুরু হয় লড়াই। অন্ধকার নামার পরও মোরগের লড়াই চলতে থাকে। ছুরি দিয়ে একে অপরকে বিধ্বস্ত করছে। ডানা ঝটপট করছে। রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আর ততই হাততালির ঝড় উঠছে। ফাইল চিত্র