নকল সোনার কয়েনের কারবার, গ্রামে এখন প্রাসাদোপম বাড়ি! কারবারিদের মাথায় কোন প্রভাবশালীর হাত, উঠছে প্রশ্ন
বর্তমান | ২৬ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: সালটা ২০২১। নকল সোনার কয়েন কিনে প্রতারণার একের পর এক অভিযোগ জমা পড়তে থাকে রাজ্যের বিভিন্ন থানায়। প্রতি ক্ষেত্রেই প্রতারণার পরিমাণ লক্ষাধিক টাকার বেশি। ঘুম ওড়ে পুলিশের। তদন্তে নেমে বীরভূমের যোগসূত্র পান তদন্তকারীরা। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে সিউড়ি-২ ব্লকের দমদমা গ্রাম থেকে চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর নকল কয়েন, আগ্নেয়াস্ত্র এবং কার্তুজ। পরে ঘটনায় গ্রেফতারির সংখ্যাও বাড়ে। এনিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে এক পুলিশ আধিকারিক দাবি করেছিলেন, এই প্রতারণা চক্র আমরা নির্মূল করবই। কিন্তু এই প্রতারণা চক্র এখন শাখা প্রশাখা বিস্তার করেছে। সেদিন প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত যাদের শ্রীঘরে পাঠিয়েছিল পুলিশ, প্রভাবশালীদের ‘আশীর্বাদে’ আজ তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা এখন প্রসাদোপম বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ির মালিক।
স্থানীয়দের একাংশের দাবি, প্রতারণা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। কিন্তু গত এক বছরে পুলিশের চাপে কিছুটা ব্যাকফুটে কারবারিরা। প্রশ্ন উঠছে, সেই কারণেই কী ওই ব্লকের প্রভাবশালীদের একাংশের এত ক্ষোভ পুলিশের উপর? পুলিশের মহলের একাংশের দাবি, প্রভাবশালীদের স্বার্থে আঘাত লাগলে তো তারা কাউকেই ছেড়ে কথা বলে না। সে যত বড় আধিকারিকই হোন না কেন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, আজ থেকে চার বছর আগে নকল সোনার কারবারে যারা জেলে গিয়েছিল, তাদের দলপতি এখন কালো স্করপিওর সওয়ারি। ওই প্রতারকের বাবা এক সময় দোকানে দোকানে অব্যবহৃত বস্তা, টিন জোগাড় করে তা বিক্রি করে সংসার চালাতেন। এখন প্রতারকের বিলাসবহুল তিনতলা বাড়ি দেখলে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় হয়। গোটা গ্রাম ঘুরলেও ওরকম দ্বিতীয় একটা বাড়ি খুঁজে পাওয়া যায় না। ওই এলাকার কয়েকজন প্রবীণ বাসিন্দার কথায়, এইসব প্রতারকদের থাকার কথা জেলের ভিতরে। কিন্তু প্রত্যেকের সঙ্গে প্রভাবশালীদের যোগ রয়েছে। টাকার লেনদেন রয়েছে। পুলিশও তাদের বিশেষ কিছু করতে পারে না। শুধু তাই নয়, সেইসব প্রভাবশালীদের সঙ্গে প্রতারকদের ছবিও দেখতে পাওয়া যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
কীভাবে হয় নকল সোনার কয়েনের প্রতারণা? পুলিশ জানাচ্ছে, প্রতারকরা অচেনা নম্বরে ফোন করে নিজেদের অত্যন্ত গরিব বলে পরিচয় দেয়। মাটির ঘর ভাঙতে গিয়ে সোনার কয়েন ভর্তি ঘড়া প্রাপ্তির গল্প শোনায়। সেগুলি সস্তায় বিক্রির কথা বলে। এমন ফোন পেয়ে কেউ সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর পায়, আপনি আসুন। একটা-দু’টো মোহর নিয়ে যাচাই করবেন, তারপর মন হলে নেবেন। এতেই খানিকটা বিশ্বাস জন্মে যায় অনেকের। এরপর ক্রেতারা তা দেখতে এলে শুরু হয় দরদাম। কেউ লক্ষাধিক টাকা খরচ করে নকল কয়েন কিনে বাড়ি ফেরে। কেউ যদি এই নকল করবার বুঝতে পেরে যান, তাহলে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে তাঁর সর্বস্ব কেড়ে নেওয়া হয়। দিনের পর দিন বহু মানুষ এই চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন। এই কারবারের রাশ কার হাতে থাকবে সেই নিয়ে খুন, শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বোমাবাজির সাক্ষীও থেকেছে এই জেলা। তবুও কারবারে রাশ পড়েনি।
পুলিশের এক আধিকারিকের অবশ্য দাবি, এই ধরনের প্রতারণা বন্ধ করতে মানুষকে সাবধান করা হচ্ছে। অপরাধীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে।