• মোদীকে ‘রয়েসয়ে’ ব্যবহার বিজেপির, লক্ষ্য জনপ্রিয়তার মহিমা অক্ষুণ্ণ রাখা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৬ নভেম্বর ২০২৫
  •  

    ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রচারে প্রধান মুখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সেই মুখের জনপ্রিয়তা যাতে ‘অতি ব্যবহারে’ মলিন হয়ে না যায়, এই ভাবনা থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এ বার প্রচারে ‘রয়েসয়ে’ ব্যবহার করতে চলেছে বিজেপি। এমনটাই ইঙ্গিত মিলেছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরের আলোচনা থেকে।

    বিজেপি সূত্রের দাবি, আগামী ডিসেম্বর থেকেই বাংলায় মোদীর নির্বাচনী অভিযান শুরু হবে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশন চলার ফাঁকে কোনও শনিবার বা রবিবার এই জনসভা পর্ব শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডিসেম্বর থেকে নির্বাচন-পর্ব শেষ হওয়া পর্যন্ত মোট ১৪ থেকে ১৫টি সভা করতে পারেন মোদী, এর বেশি নয়। এমনই পরিকল্পনা গেরুয়া শিবিরের।

    প্রসঙ্গত, বাংলায় ভোটের ঘোষণা হতে এখনও অন্তত তিন মাস বাকি। ভোটপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে লাগতে পারে দুই থেকে আড়াই মাস। সে হিসাবে ডিসেম্বর থেকে প্রচার শুরু হলে প্রায় মাস পাঁচেক ধরে চলবে মোদী-প্রচারের প্রতিধ্বনি। কিন্তু এই পাঁচ মাসে যদি প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ ১৫টি সভা করেন, তা হলে রাজনৈতিকভাবে সেটি বিজেপির কৌশলগত হিসেব বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।

    ২০২১ সালের চিত্রটা ছিল অন্যরকম। তখন বিজেপি ঘোষণা করেছিল, বাংলার মাঠ-ময়দানে মোদীর প্রায় ৪০টি সভা হবে। ব্রিগেডে সভা, জেলার প্রান্তিক অঞ্চলে মোদীর জনসমাবেশ, রোড শো— গোটা প্রচারসূচি তখন ছিল সম্পূর্ণ মোদীময়। রাজ্য বিজেপি নেতারা সেই সময় নাম দিয়েছিলেন ‘কার্পেট বম্বিং’। অর্থাৎ বিজেপি বিশ্বাস করত, মোদীর বক্তৃতার ধাক্কায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দুর্গ’ ভেঙে পড়বেই। কিন্তু ফল হয়েছিল উল্টো।

    এই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই শুধু বাংলা নয়, গত কয়েক বছর অন্য রাজ্যেও মোদীর সভা কমানো হয়েছে। মহারাষ্ট্রে এর আগে বিধানসভায় অনেক বেশি সভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ২০২৪ সালে সেখানে করলেন মাত্র ৯টি সভা। হরিয়ানায় ২০১৪ সালে ১০টি জনসভা করলেও, ২০২৪ সালে করেছেন মাত্র ৪টি। অথচ দুই রাজ্যেই বিজেপি ক্ষমতায় টিকে আছে এবং আসন সংখ্যাও বেড়েছে। ফলে নীতিবদলের যৌক্তিকতা আরও দৃঢ় হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

    রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য প্রকাশ্যে কোনও কৌশলের কথা মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, ‘প্রধানমন্ত্রী কতগুলি সভা করবেন, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। নির্বাচনী রণকৌশল প্রকাশ্যে বলা যায় না।’ তবে তাঁর দাবি, মোদী যাই করুন, ‘২০২৬ সালে তৃণমূলের বিদায় নিশ্চিত’।

    গেরুয়া শিবিরের অন্দর মহলের অনেকেই বলছেন, ‘মোদী দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ। সব জায়গায় এক কথা বলতে বাধ্য হলে তাঁর বক্তব্যের নতুনত্ব নষ্ট হয়। ফলে মহিমা কমে যায়।’ তাই এ বার মূল ধ্বনি নয়, প্রতিধ্বনি শুনিয়ে প্রচার চালাবে বিজেপি। মোদীর বক্তৃতা কম হলেও, সেই বক্তব্য রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে দেবেন নেতা থেকে কর্মী— সকলেই।

    অর্থাৎ, বাংলার মাটিতে আবার মোদী আসছেন, কিন্তু বারবার নয়। জনপ্রিয়তার জৌলুস যাতে কলঙ্কমুক্ত থাকে, সেই হিসেবেই রাজনীতির দাবার ছকে নতুন চাল দিতে চলেছে গেরুয়া শিবির।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)