সুগত বন্দ্যোপাধ্যায়
আচমকা ঘরের ভোলবদল! বিবাদী বাগ চত্বরে বামার লরি হাউসের চারতলায় অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক অরুণ প্রসাদের চেম্বারের কাচের দরজা-জানলায় এতদিন সাঁটানো ছিল ওয়ান ওয়ে ভিশন স্টিকার। যাতে ঘরের ভিতর থেকে বাইরেটা দেখা গেলেও বাইরে থেকে চেম্বারের ভিতরের অংশ দেখা যাবে না। ছিল ডিজিটাল লকও। চেম্বারের ভিতরের ব্যক্তিটি স্বয়ংক্রিয় লক না-খুললে দরজা ঠেলে যে কেউ যে কোনও সময়ে ভিতরে ঢুকতে পারবেন না। মঙ্গলবার হঠাৎই সেই চেম্বারের ভোল পাল্টে ফেলা হলো। তুলে দেওয়া হলো কাচের দরজা-জানলার ওই বিশেষ স্টিকার, খোলা হলো ডিজিটাল লকও।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দপ্তরের এক শীর্ষ আধিকারিকের ঘরের চেহারা বদল নিয়ে এত জল্পনা কেন? কেনই বা এই পরিবর্তন? এ নিয়ে অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক বা সিইও দপ্তরের অফিসাররা কেউ মুখ খোলেননি। আগেও এই ঘরে একাধিক অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক বসেছেন, কাজ করেছেন। কখনও ঘরের কাচের দরজায় এমন স্টিকার লাগানো হয়নি। ডিজিটাল লক তো দূর অস্ত্র, বসানো হয়নি কোনও সাধারণ লকও। তবে অরুণ প্রসাদ নদিয়ার জেলাশাসকের পদ থেকে বদলি হয়ে অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দায়িত্ব গ্রহণ করার অল্প দিনের মধ্যেই ঘরের সাজসজ্জায় বদল এনেছিলেন।
এমন ডিজিটাল লকের সিস্টেম রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালের চেম্বারেও নেই। সাধারণত অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দায়িত্ব হলো, ভোটের সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়টি নিয়ে সিইও-র সঙ্গে রাজ্য পুলিশের সমন্বয় সাধন করা। কমিশনের পক্ষে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সমন্বয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিও তাঁরই নিয়ন্ত্রণে থাকে। ভোট ঘোষণার আগে এই মুহূর্তে অরুণ প্রসাদ ভোটার তালিকার স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশনের (সার) কাজে জেলাশাসকদের সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছেন।
সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার হঠাৎ ডিজিটাল লক-সহ যাবতীয় স্টিকার খুলে ফেলার নির্দেশ দেন অরুণ। এর কারণ কী, তা নিয়ে কমিশনের তরফে কেউ মুখ না-খুললেও ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের বক্তব্য, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কিছু দিন আগে সরাসরি রাজ্যে সফররত ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতীর কাছে অরুণ প্রসাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, প্রায় প্রতিদিন তিনি ফোনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের ফোন থেকেই এই যোগাযোগ হচ্ছে। অভিযোগের পক্ষে তথ্যপ্রমাণও ডেপুটি নির্বাচন কমিশনের হাতে তিনি তুলে দিয়েছেন বলে বিরোধী দলনেতা দাবি করেছিলেন। সে সময়েও অবশ্য নবান্নের কর্তারা এ নিয়ে মন্তব্য করেননি। এ দিন অরুণের ঘর বদল নিয়েও তাঁরা নিরুত্তর।