• সন্তান ভূমিষ্ট হোক ভারতের মাটিতে, আর্জি বাংলাদেশে বন্দি অন্তঃসত্ত্বা সোনালির বাবা-মায়ের
    প্রতিদিন | ২৬ নভেম্বর ২০২৫
  • সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সোনালির সন্তান ভারতের মাটিতেই ভূমিষ্ঠ হোক। আর্জি বাবা-মা-সহ পাইকরবাসীর। নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবিকে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দেওয়ার পর পুশব্যাকের ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। বাংলদেশ থেকে সোনালি-সহ ছয়জন কবে ভারতে ফেরানো হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছেই। চিন্তায় তাঁর স্বজনরা।

    বীরভূমের পাইকর ও আশপাশের দর্জিপাড়া-ফকিরপাড়ার বাসিন্দা সোনালি বিবি-সহ ছয়জন দীর্ঘদিন ধরেই পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে পরিবারের সঙ্গে ভারতেই থাকতেন বলে দাবি পরিবারের। সোনালির বাবা ভোদু শেখ ও মা জোৎস্না বিবির নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় রয়েছে। যার পৃষ্ঠা ৬৮৯, সিরিয়াল নম্বর ১০০। তা সত্ত্বেও তাঁদের মেয়েকে বিদেশিনী বলে আটকের পর বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ বেআইনিভাবে পুশব্যাক করেছে বলে অভিযোগ। এরই মধ্যে অবাক করে দিয়ে নির্বাচন কমিশনের এনুমারেশন ফর্ম পৌঁছে গিয়েছে সোনালি ও সুইটি বিবিদের বাড়িতেও। ফলে এলাকায় প্রশ্ন উঠেছে—যদি তাঁরা বাংলাদেশি হন, তবে ভোটের নথি তাঁদের বাড়িতে পৌঁছল কীভাবে? সোনালির বাবা ভুদু শেখের কথায়, “মেয়ে কবে ফিরবে জানি না, শুধু অপেক্ষা করছি। মন ভরে কান্না ছাড়া কিছুই করতে পারছি না।’’

    বর্তমানে সোনালি ও আরও পাঁচজন বাংলাদেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সংশোধনাগারে বন্দি। অন্তঃসত্ত্বা সোনালির শারীরিক অবস্থার কারণে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। পরিবারের সদস্যদের কথায়, ‘‘ওখানে সন্তান জন্মালে আইনি জটিলতা আরও বাড়বে।’’ সোনালির মামাতো ভাই রকি শেখ বলেন, ‘‘দিদি প্রসবা অবস্থায় না থাকলে হয়তো এত আতঙ্ক থাকত না।’’ বাবা ভোদু শেখ কান্নাজড়িত গলায় বলেন, ‘‘কবে মেয়ে ফিরবে তার কোনও ঠিক নেই, শুধু অপেক্ষা আর অশ্রুই সঙ্গী।’’ একই আতঙ্ক সুইটি বিবির পরিবারেও।

    সোনালির সঙ্গে সাক্ষাৎ করা পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সাংসদ সামিরুল ইসলামের প্রতিনিধি মফিজুল শেখ বলেন, ‘‘আমি গত ১৮ নভেম্বর আবারও বাংলাদেশে এসেছি। তারপর সোনালি ও সুইটির সঙ্গে কথা হয়েছে এক ঘণ্টা। তাঁরা শুধু জানতে চেয়েছেন কবে ফিরবেন, সুপ্রিম কোর্ট কী বলেছে। কিন্তু ভারতীয় দূতাবাসের নীরবতায় তাঁদের কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারিনি।’’

    পুশব্যাকের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল ছ’জনকে চার সপ্তাহের মধ্যে ভারতে ফিরিয়ে আনতে। এখন শীর্ষ আদালত একই রায় দিয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব নথি খতিয়ে দেখতে হবে। আদালতের মন্তব্যে কেন্দ্র কার্যত চাপে পড়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। পাইকর, দর্জিপাড়া ও ফকিরপাড়ার মানুষজনের একটাই আশা–সোনালির সন্তান যেন নিজের দেশে জন্মায়, আর দ্রুতই বাড়ি ফিরে আসতে পারেন।
  • Link to this news (প্রতিদিন)