উলুবেড়িয়ায় দুর্ঘটনা! জলে ডুবে মৃত্যু ৩ পড়ুয়ার, একগুচ্ছ পদক্ষেপ প্রশাসনের
প্রতিদিন | ২৭ নভেম্বর ২০২৫
মণিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: উলুবেড়িয়ায় গাড়ি দুর্ঘটনার ঘটনায় পরতে পরতে রহস্য। ধৃত চালক শ্রীমন্ত বাগ বারবার বদল করছে নিজের বয়ান। পুলিশকে প্রথমে সে জানিয়েছিল তাঁর নিজের গাড়িটি অন্য স্কুলের বাচ্চাদের নামাতে গিয়েছিল। কিন্তু পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসছে অন্য তথ্য। তার নিজের গাড়িটি বিয়ে বাড়িতে ভাড়া গিয়েছিল। আর সেই কারণেই বন্ধুর মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়িটি নিয়ে পড়ুয়াদের আনতে গিয়েছিল শ্রীমন্ত।
দুর্ঘটনার পরে পুলিশ শ্রীমন্তকে গ্রেপ্তার করে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে। সে বার বার পুলিশকে নতুন তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে বলে জানা গিয়েছে। একবার সে জানিয়েছে নিজের গাড়ি অন্য স্কুলের ছাত্রদের আনতে যাওয়ায় সে বন্ধুর গাড়ি নিয়েছিল। আবার একবার জানিয়েছে তার গাড়িটি বিয়ে বাড়িতে ভাড়ায় গিয়েছিল। স্থানীয় চালকরা জানিয়েছে কিছুদিন আগেই শ্রীমন্ত ওই গাড়িটি ১৫ হাজার টাকায় বন্ধুর কাছ থেকে কিনে নেয়। যদিও গাড়িতেটি সত্যিই বন্ধুর না তাঁর নিজেরই তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। শ্রীমন্ত জানিয়েছে তাঁর হার্টের অসুখ হওয়ায় মাঝে বেশ কিছুদিন সে কাজ করেনি। হার্টের অপারেশনের কারণে সে মাস দু’য়েক অসুস্থ থাকায় অন্য চালক শিশুদের আনতে যেত। অনেকের প্রশ্ন অসুস্থ থাকলে কেন গাড়ি চালাচ্ছিল শ্রীমন্ত? পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে গাড়ির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে জেনেও কেন সেই গাড়ি নিয়ে বেরল সে?
এদিকে এই ঘটনার পর পুলিশ, উলুবেড়িয়া আঞ্চলিক পরিবহন দপ্তর ও উলুবেড়িয়া মহকুমা প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। বুধবার তারা উলুবেড়িয়ার মহাকুমার বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। হাওড়া গ্রামীণ জেলার বাগনান থানা সহ বিভিন্ন থানার পুলিশও বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে পুলকার চেক করেছে। পুলকার চালকদের সঙ্গে কথা বলেছে এবং স্কুল কর্তৃপক্ষদের সঙ্গেও কথা বলেছে। মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অবিলম্বে স্কুলের নিয়ন্ত্রণে থাকা এবং অভিভাবকদের ঠিক করা সব পুলকারের যাবতীয় তথ্য প্রশাসনকে জানাতে হবে। সব গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর, মেয়াদের সময়সীমা, ব্যক্তিগত নাকি ব্যবসায়িক গাড়ি, মালিক-ড্রাইভার এবং কন্ডাক্টরের নাম তাদের লাইসেন্স নম্বর ও মোবাইল নম্বর দিতে বলা হয়েছে। এই সব তথ্য দিয়ে ফরর পূরণ করে জমা দিতে বলা হয়েছে। গাড়ির মধ্যে ভেহিকেল লোকেশন ট্র্যাকার লাগাতে হবে বলেও জানানো হয়েছে।
পরিবহন দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয় স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন হলে তাদের গাড়িগুলো পরীক্ষার জন্য পরিবহন দপ্তরকে জানালে পরিবহন দপ্তরের কর্মীরা স্কুলে গিয়ে সেগুলো পরীক্ষা করবে। হাওড়ার গ্রামীণ এলাকার পুলিশ সুপার সুবিমল পাল জানিয়েছেন। “চালকদের স্বাস্থ্য এবং চক্ষু পরীক্ষার রিপোর্ট স্কুলে রাখতে হবে এবং প্রশাসনকে জানাতে হবে।”
দুর্ঘটনার সময় চালকের আসনে থাকা অসুস্থ শ্রীমন্ত নিজে কোনও রকমে গাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রাণ বাঁচায়। তারপরে পড়ুয়াদের দিকে আর তার কোনও হুঁশ ছিল না। সামনে বসে থাকা দুই ছাত্র প্রিয়ম ও অর্ঘ্য ডুবে যাওয়া গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। প্রিয়ম গাড়ির পিছনের দিকে জানালা দিয়ে বের হয়। আর সামনের দিকে জানালা দিয়ে বের হয় অর্ঘ্য। বাকি তিন জন ঈশিতা মন্ডল, শৌভিক দাস ও অরিন দে গাড়ি থেকে বেরতে পারেনি। এরপরেই গ্রেপ্তার হয় চালক শ্রীমন্ত বাগ।