• কোটশিলার সিমনিতে নতুন পুরুষ চিতাবাঘের প্রবেশ! বাড়বে প্রজনন, আশা বন দপ্তরের
    প্রতিদিন | ২৭ নভেম্বর ২০২৫
  • সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: মিলনের টানে নতুন টেরিটোরির সন্ধানে একটি নতুন পূর্ণবয়স্ক পুরুষ চিতাবাঘ প্রবেশ করেছে পুরুলিয়ার কোটশিলার সিমনির জঙ্গলে। চলতি মাসের ১৩ ও ১৪ তারিখ পরপর দু’দিন পুরুলিয়া বনবিভাগের ক্যামেরা ট্র্যাপে ওই পুরুষ পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘ ধরা পড়ে। ফলে বন দপ্তরের ধারণা ওই পুরুষ চিতাবাঘটি নতুন।

    এই জঙ্গলে থাকা মাদি চিতাবাঘের দুই সন্তান পূর্ণবয়স্ক হয়ে ওঠার পথে। তাই বিড়াল প্রজাতির বন্যপ্রাণের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রজননে আগ্রহী ওই মাদি চিতাবাঘ। ফলে পুরুলিয়া বন বিভাগের আশা, নতুন করে বংশবৃদ্ধি হতে পারে। আর তাহলে নতুন জিনগত বৈশিষ্ট্য দেখা যাবে। যা বাইরে থেকে প্রবেশ। পুরুলিয়া বনবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, নতুন পুরুষ চিতাবাঘকে নিয়ে ওই জঙ্গলে ৭টি চিতাবাঘ রয়েছে। ২০২২ সালে পরপর পুরুষ ও মাদি চিতাবাঘ ক্যামেরা ট্রাপে ধরা পরার পর পুরুলিয়া বন বিভাগ আশা করেছিল এই জঙ্গলেই চিতাবাঘের বংশবৃদ্ধি হবে।

    বাস্তবে সিমনির জঙ্গল এখন চিতাবাঘের ঘরসংসার। দুটি শাবক, সাব অ্যাডাল্ট হয়ে যেমন পূর্ণবয়স্কের পথে পা বাড়িয়েছে। ওই চিতাবাঘগুলির পিছু পিছু আরও দুটি চিতাবাঘ এখানে আছে। আর এই নতুন চিতাবাঘ মিলিয়ে সংখ্যাটা হচ্ছে ৭ বলে পুরুলিয়া বনবিভাগের তরফে জানানো হয়েছে। ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, “কিছুদিন হল কোটশিলা বনাঞ্চলে আরেকটি পুরুষ চিতাবাঘের প্রবেশ হয়েছে। ক্যামেরা ট্র্যাপে আমরা সেই ছবি পেয়েছি। এই জঙ্গলে যদি বাইরের জিনের মধ্য দিয়ে বংশবিস্তার হয় তাহলে তা উল্লেখযোগ্য বিষয়। এই বনাঞ্চলে চিতাবাঘ একটা সক্ষম সংখ্যার দিকে এগোচ্ছে সেটা নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে।”

    পুরুলিয়া বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পুরুষ পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘটি ওই জঙ্গলে শিকারও করছে। সেই ছবিও বন্দি হয়েছে ক্যামেরা ট্রাপে। সবে মিলিয়ে নতুন চিতার প্রবেশে আরও একবার প্রমাণ সিমনির জঙ্গল জীববৈচিত্র্যে ব্যাপকভাবে উন্নত। পুরুলিয়া বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসের ১৩ তারিখ ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ ও ১৪ তারিখ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ ছবিগুলো ধরা পড়ে। পুরুলিয়া বনবিভাগের প্রাথমিক অনুমান, ঝাড়খণ্ডের দলমা বা হাজারিবাগ থেকেই ওই পুরুষ পূর্ণ চিতাবাঘটি আসতে পারে। বিড়াল প্রজাতি বন্যপ্রাণের ক্ষেত্রে কোনও মাদি বন্যপ্রাণ সন্তান প্রসব করার পর কখনওই সেভাবে মিলনে আগ্রহ দেখায় না। যতক্ষণ না পর্যন্ত তার শাবক বড় হচ্ছে।

    তাছাড়া এই বিড়াল প্রজাতির বন্যপ্রাণের মধ্যে মিলনের টানে হাজার কিমি পথ পাড়ি দেওয়া একেবারেই অবিশ্বাস্য নয়। গত শীতের মরশুমে যা উদাহরণ হয়ে রয়েছে। ঝাড়খণ্ডের পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে আসা কিলা যেভাবে জিনাতের টানে পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম এমনকি বাঁকুড়ার জঙ্গলেও ঘুরে বেড়ায়। তবে সিমনি বিটে থাকা চিতাবাঘও মাঝেমধ্যে ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলেও যাচ্ছে বলে পুরুলিয়া বনবিভাগ জানিয়েছে। তবে এই চিতাবাঘ গুলি ঝাড়খণ্ডে শিকার করলে সেখানে হইচই বাঁধলেও এখানে অর্থাৎ কোটশিলাতে বিশেষ করে সিমনি এলাকার জঙ্গলে চিতাবাঘের শিকারে গবাদিপশুর মৃত্যু ঘটলেও এলাকার মানুষজন একটি কথাও বলেন না। তারা চান তাদের সিমনির জঙ্গল আরও সমৃদ্ধ হোক। যাকে ঘিরে এই এলাকায় ওয়াইল্ড লাইফ ট্যুরিজমেরও প্রসার ঘটে। তবে পুরুলিয়া বনবিভাগ এই এলাকাকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল করা যায় কিনা তার ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে। সেই মোতাবেক অরণ্যভবনে প্রস্তাব পাঠাতে প্রাথমিক প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
  • Link to this news (প্রতিদিন)