ডেটিং অ্যাপের ‘বান্ধবী’কে নিয়ে বেরিয়েছেন? ভুলেও ব্যাঙ্কের তথ্য দেবেন না, সতর্কবার্তা কলকাতা পুলিশের
প্রতিদিন | ২৭ নভেম্বর ২০২৫
অর্ণব আইচ: একের পর এক ডেটিং অ্যাপে বিশেষ বন্ধুত্বের নামে ব্ল্যাকমেল, প্রতারণার ঘটনা চাঞ্চল্য ফেলে দেওয়ার পর সতর্কবার্তা দিল কলকাতা পুলিশ। গত কয়েক মাসে কলকাতা ও আশপাশের জেলায় কয়েকটি ঘটনায় ডেটিং অ্যাপ ‘বান্ধবী’দের ফাঁদে পড়ে প্রচুর টাকা খুইয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাই ডেটিং অ্যাপে স্বল্পসময়ের ‘বান্ধবী’কে কোনও অবস্থায়ই ব্যাঙ্কের খুঁটিনাটি তথ্য, এমনকী নিজের সম্পর্কেও যাবতীয় বিষয় না জানানোর পরামর্শ দিচ্ছে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, ডেটিং অ্যাপে যোগাযোগ করে সকলেই যে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, টাকা খোয়াচ্ছেন, এমন নয়। কিন্তু এর মধ্যে ব্ল্যাকমেল অথবা প্রতারণার ফঁাদ পাতছে কয়েকটি চক্র। ওই চক্রে মহিলাদের সঙ্গে রয়েছে পুরুষরাও। সম্প্রতি কসবার হোটেলে পা বেঁধে গলায় বেডশিট জড়িয়ে খুন করা হয় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আদর্শ লোসালকাকে। এর পিছনেও রয়েছে ডেটিং অ্যাপ। কারণ, আদর্শ খুনের দুই অভিযুক্ত কোমল সাহা ও ধ্রুব মিত্র ডেটিং অ্যাপ চালাত। ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমেই তারা ধরত ‘ক্লায়েন্ট’।
আর সেই ‘ক্লায়েন্ট’দের ব্ল্যাকমেল করে টাকা হাতিয়ে নিত তারা। পুলিশের পরামর্শ, ডেটিং অ্যাপে পরিচয়ের পর কেউ ‘বান্ধবী’টির সঙ্গে হোটেল বা অন্য কোথাও গেলেও তাঁকে যেন নিজের ব্যাঙ্কের কোনও তথ্য না দেন। এই ধরনের ডেটিংয়ে গেলে মূল্যবান সামগ্রী সঙ্গে না রাখাই ভাল। এমনকী, নিজের এটিএম কার্ডও সামলে রাখতে হবে। অনলাইনে টাকা মেটানোর ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। যেহেতু স্বল্পপরিচিত, তাই ‘ডেটিং অ্যাপ বান্ধবী’র সামনে এমনভাবে মোবাইল ব্যবহার করতে হবে, যাতে তিনি মোবাইলের পিন নম্বর বা প্যাটার্ন দেখতে না পান।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, গত মাসেই মিন্টো পার্কের কাছে একটি অফিসে হানা দেন লালবাজারের সাইবার থানার গোয়েন্দারা। এখানেই অফিস ভাড়া নিয়ে বেআইনি কল সেন্টার খুলে চলছিল ডেটিং অ্যাপ চক্র। গোয়েন্দা পুলিশ সেখানে তল্লাশি চালিয়ে ১৬ জন মহিলা-সহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে। তারা প্রেমের অভিনয় করেই ডেটিংয়ে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিত টাকা। আবার গত মাসেই ডেটিং অ্যাপে পরিচয় হওয়ার পর এক ব্যবসায়ীকে পূর্ব যাদবপুর এলাকার একটি হোটেলে নিয়ে প্রচুর মদ্যপান করায় অঙ্কিতা আপ্তে নামে এক মহিলা। ব্যবসায়ী ঘুমে ঢলে পড়েন। তারপর তাঁর সোনার অলঙ্কার লুঠ করে উধাও হয়ে যায় সেই বান্ধবী।
ওই ব্যবসায়ী পূর্ব যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও আসলে মহিলাটি কে, আদৌ তাঁর নাম অঙ্কিতা কি না, সে ব্যাপারে সন্দিহান পুলিশও। আবার এর মধ্যেই হাওড়ার লিলুয়া থেকে রিয়া রায় নামে এক মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডেটিং অ্যাপে বন্ধুত্বের ফাঁদে ফেলে একাধিক ব্যক্তিকে প্রতারণায় অভিযুক্ত তিনি। আগেও একই পদ্ধতিতে বালিগঞ্জ ও ভবানীপুর এলাকার হোটেলে নিয়ে গিয়ে টাকা ও অলঙ্কার হাতিয়ে নিয়েছে ডেটিং অ্যাপ চক্র। এই ব্যাপারে ধরপাকড়ও করেছে পুলিশ। আবার প্রতারণার পরও অনেকে অভিযোগ জানাতে চান না। ডেটিং অ্যাপে অনেক যৌনকর্মীও ব্যবসা করেন। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ব্ল্যাকমেল ও প্রতারণার কারবার চালানো হয়। ডেটিং অ্যাপ চক্র থেকে বাঁচতে গেলে সতর্ক থাকতে হবে, বলছে পুলিশ।