• চিনকে টেক্কা দিতে ‘মেগা মিশন’, ৭,২৮০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প আনছে ভারত, রইল খুঁটিনাটি
    এই সময় | ২৭ নভেম্বর ২০২৫
  • স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ছাড়া আজ দুনিয়া অচল। কিন্তু অনেকেই জানেন না, এগুলো তৈরি করতে রেয়ার আর্থ ম্যাগনেট লাগে। উইন্ড টারবাইন থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল, এমনকী F-35 যুদ্ধবিমানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ এই রেয়ার আর্থ ম্যাগনেট থেকেই তৈরি হয়। সমস্যা হলো, এর অধিকাংশটাই আসে বিদেশ থেকে। আরও স্পষ্ট করে বললে, চিন থেকে। সেই আধিপত্যে ভাগ বসাতে এ বার ৭,২৮০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্পের অনুমোদন দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। লক্ষ্য একটাই, দেশে রেয়ার আর্থ ম্যাগনেটের উৎপাদন বাড়ানো।

    পরিসংখ্যান বলছে, রেয়ার আর্থ ম্যাগনেটের আন্তর্জাতিক বাজারের ৯০ শতাংশই দখল করে বসে রয়েছে চিন। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারেও এটাকেই হাতিয়ার করে তারা। কিন্তু চিনের রপ্তানি আইন অত্যন্ত কঠোর। ইদানীং এই নিয়ে কিছু কড়াকড়িও করেছে বেজিং। তার পর থেকেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। চিনের দাবি, তাদের রেয়ার আর্থ ম্যাগনেট সামরিক খাতে কাজে লাগাচ্ছে একাধিক দেশ। তাই নতুন নীতি নিয়ে আসছে তারা। ফলে আগামী দিনে সরবরাহে খামতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

    সেই জায়গাটা পূরণ করতে চাইছে ভারত। রেয়ার আর্থ ম্যাগনেট উৎপাদনে কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন প্রকল্পের পোশাকি নাম হলো ‘স্কিম টু প্রোমোট ম্যানুফ্যাকচারিং অফ সিন্টার্ড রেয়ার আর্থ পার্মানেন্ট ম্যাগনেট’। সোজা কথায়, দেশিয় ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে চাইছে মোদী সরকার।

    নিওডিমিয়াম, সামারিয়ামের মতো রেয়ার আর্থ মেটেরিয়াল থেকে ম্যাগনেট বা চুম্বক তৈরি হবে। এর জন্য গড়ে তোলা হবে ঘরোয়া সাপ্লাই চেন। সেই লক্ষ্যেই দেশে প্রথমবার রেয়ার আর্থ পার্মানেন্ট ম্যাগনেট কারখানা গড়ে তুলতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। যেখানে দীর্ঘস্থায়ী এবং উচ্চ তাপমাত্রায় কার্যকর রেয়ার আর্থ ম্যাগনেট উৎপাদন করা হবে। রেয়ার আর্থ অক্সাইডকে প্রথমে ধাতুতে, তার পরে ধাতুকে অ্যালয়ে এবং সেই অ্যালয়কে চূড়ান্ত ম্যাগনেটে রূপ দেওয়ার কাজ চলবে কারখানায়। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সাত থেকে দশ বছরের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

    বাণিজ্যিক দিক থেকে রেয়ার আর্থ ম্যাগনেটের কোনও বিকল্প নেই। অন্তত এখনও পর্যন্ত। একটি মাঝারি আকারের ইলেকট্রিক ভেহিক্যালে ১ থেকে ২ কেজির ম্যাগনেট লাগে। 3-MW অফশোর উইন্ড টারবাইনে লাগে ৬০০ কেজির ম্যাগনেট। আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। তাছাড়া ২০৩০-এর মধ্যে দেশের রাস্তায় ৩০ শতাংশ ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। পাশাপাশি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনও বাড়ছে। ফলে আগামী দিনে ঘরোয়া বাজারেও এর চাহিদা বাড়বে।

    দেশে প্রায় ৬.৯ মিলিয়ন টন রেয়ার আর্থ অক্সাইড মজুত রয়েছে বলে অনুমান বিশেষজ্ঞদের। এর বেশিরভাগটাই দক্ষিণ ভারতে। বিশেষ করে, তামিলনাড়ু, কেরালা অন্ধ্রপ্রদেশ এবং কন্যাকুমারীর উপকূলে এর বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে। ওডিশার গঞ্জাম, বালাসোর এবং ময়ূরভঞ্জ থেকেও রেয়ার আর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। রাজস্থান, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডেও স্বল্প পরিমাণে মজুত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

  • Link to this news (এই সময়)