• কোনও শর্তেই অযোগ্যদের চাকরি নয় যোগ্য ও নতুনদের পৃথকভাবেই নিয়োগের সুপ্রিম পরামর্শ, এসএসসি মামলা ফিরল হাইকোর্টে
    বর্তমান | ২৭ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: বিশেষভাবে সক্ষম হোন (প্রতিবন্ধী) বা অন্য কেউ, কোনও ‘অযোগ্য’কেই চাকরি দেওয়া যাবে না। স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) বুধবার এমনটাই জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। এমনকি, ক্যানসার আক্রান্ত আবেদনকারীরও আবেদন ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি অলোক আরাধের বেঞ্চ জানিয়েছে, একমাত্র সোমা দাস ছাড়া কাউকেই চাকরিতে সুযোগ নয়। 

    সোমা দাস ক্যানসার। তিনি যোগ্য চাকরিপ্রার্থী। তাই তাঁর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। বাকিদের ক্ষেত্রে কোনও সুযোগ নয়। অযোগ্যদের কোনওভাবেই চাকরি দেওয়া যাবে না। আদালত জানিয়েছে, যাঁরা অযোগ্য, তাঁদের নামের তালিকা বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করতে করতে হবে। 

    একইসঙ্গে এদিন এসএসসি সংক্রান্ত ৪০টি মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিল, যাবতীয় মামলা এখন শুনবে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি সঞ্জয় কুমার বলেন, আমরা শুধু দেখব সুপ্রিম কোর্টের ৩ এপ্রিলের রায় ঠিকমতো মানা হচ্ছে কি না। সেখানে স্পষ্ট করে বলা আছে, কোনও অযোগ্যকে চাকরি নয়। তাই বারবার শীর্ষ আদালতে আবেদন করে কোনও লাভ নেই। হাইকোর্টে যে মামলা চলছে, সেখানেই যান। দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী। নতুন করে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ করতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট।সেই নিয়োগে নবম-দ্বাদশে অযোগ্যের তালিকায় থাকা সত্ত্বেও কয়েকজন বিশেষভাবে সক্ষমকে চাকরিতে সুযোগ দিতে চেয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু বিশেষভাবে সক্ষম ও অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দেওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছিল, তাই কয়েকজন বিশেষভাবে সক্ষমকে চাকরি দিতে ঩চেয়েছিল কমিশন। এদিন আদালতে কমিশনের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারের পক্ষে ছিলেন আ‌ইনজীবী কপিল সিবাল। অন্যদিকে, কমিশনের আবেদনের বিরোধিতায় ছিলেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, মানেকা গুরুস্বামীর মতো আইনজীবীরা। কমিশন বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও আদালত তা গ্রাহ্য করেনি।

    আদালত এদিনও বলেছে, নতুনদের সঙ্গে যোগ্য চাকরিহারাদের পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। রাজ্য সরকার সেটাই করেছে। যোগ্যরা যাতে কোনওভাবে বঞ্চিত না-হন, সেটা রাজ্যকেই দেখতে হবে। এই প্রসঙ্গে যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক চিন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের এই এজলাসেই এমএ ফাইল করে আমি আবেদন করেছিলাম যাতে যোগ্য এবং নতুনদের নিয়োগপ্রক্রিয়া পৃথকভাবে হয়। তখন তাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অথচ এখন সেই আদালতেই তা ফের বলা হচ্ছে। আমাদের দাবি, যেহেতু পরীক্ষা ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে, তাই যোগ্যদের এবং  নতুনদের পৃথক শূন্যপদে নিয়োগ করা হোক। সুপ্রিম কোর্টও সেই ইঙ্গিতই করেছে।’

    এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট এই মামলা হাইকোর্টে পাঠানোয় কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাকরিহারা যোগ্য প্রার্থীরা। এক প্রার্থী বলেন, হাইকোর্টে এই সংক্রান্ত বেশকিছু মামলায় নির্দেশ সরকারের বিপক্ষেই গিয়েছে। নতুনদের সঙ্গে যোগ্যদের নিয়োগ প্রক্রিয়া চালালেও রাজ্য সরকারের ঘোষিত নীতি যোগ্যদের স্বার্থরক্ষার পক্ষে। অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর দেওয়ার পাশাপাশি, পরবর্তীতে নতুন শূন্যপদ বের করে বাকি পড়ে থাকা যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ করার উদ্যোগও নিচ্ছে সরকার। হাইকোর্টে যদি এই উদ্যোগগুলি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, তাহলে সমস্যায় পড়বেন যোগ্যরা। সব মিলিয়ে ফের একদফা অনিশ্চয়তা গ্রাস করতে চলেছে এই প্রার্থীদের।
  • Link to this news (বর্তমান)