• পাশে বসে রয়েছে নববধূ, বউভাতের দিনেও ইনিউমারেশন ফর্ম ডিজিটাইজেশনে ব্যস্ত পাত্র
    বর্তমান | ২৭ নভেম্বর ২০২৫
  • দিবাকর মজুমদার, ইটাহার: বাড়িভর্তি লোকজন, আত্মীয়-স্বজন। বাড়িতে চলছে বউভাতের আয়োজন। আনন্দ-অনুষ্ঠানে মগ্ন বাড়ির লোকজন ও আত্মীয়রা। কিন্তু পাত্রর ব্যস্ততা চরমে। অতিথিদের আপ্যায়ন, তাঁদের ভালোমন্দ দেখা, খোঁজ নেওয়ার ফাঁকেও পাত্র ব্যস্ত ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের কাজে। বউভাতের অনুষ্ঠানের মাঝেও পাত্র ব্যস্ত ইনিউমারেশন ফর্ম ডিজিটাইজেশন করতে। আত্মীয় স্বজনদের আপ্যায়ণের মাঝেই ফোন হাতে কখনও বাড়ির বাগানে, কখনও ছাদে, আবার কখনও ঘরে নববধূকে পাশে বসিয়ে বাকি ইনিউমারেশন ফর্মের তথ্য আপলোড করছেন বিএলও। তাঁর নাম সৌম্যদীপ রায়।

    ইটাহারের চাঁভোট গ্রামের বাসিন্দা সৌম্যদীপ ইটাহার বিধানসভার ৯৮ পার্টের বিএলও। তিনি পেশায় দুর্গাপুর বালিকা বিদ্যালয়ের ক্লার্ক। এবারই প্রথম বিএলও হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। বিএলও দায়িত্ব পাওয়ার আগে বিয়ে ঠিক হয়েছিল। দিনক্ষণও আগে থেকেই নির্ধারিত হয়েছিল। এসআইআর পর্বেই বিয়ের বাজার-ঘাট, নিমন্ত্রণ, বিয়ে, বউভাত- সমস্তটাই নিজহাতে সারতে হয়েছে তাঁকে। বাড়িতে মা ছাড়া আর যে কেউ নেই। 

    তাঁর সংসদে মোট ৭২৮ টি ভোটার। তার মধ্যে ৮ জন মৃত। ৫ জন অন্যত্র স্থানান্তরিত। ১ জনের খোঁজ নেই। ৭১৪ জন ভোটারের এসআইআর ফর্ম জমা নিয়ে ডিজিটাইজেশন করছেন। ইতিমধ্যে ৯৪ শতাংশ ফর্ম আপলোড করে ফেলেছেন তিনি। পুরো প্রক্রিয়া সময়ে শেষ করতে বিয়েতেও তাই বাকি কাজ করে চলেছেন সৌম্য। আত্মীয়, অতিথিদের সঙ্গে হাসিমুখে কুশল বিনিময়ের ফাঁকেও হাতে ফোন নিয়ে সতর্কভাবে করে চলেছেন ডিজিটাইজেশনের কাজ।  

    সৌম্যর বাবা বেশ কয়েকবছর আগে প্রয়াত। বোনেরও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে শুধু মা রীনা রায় রয়েছেন। পুরো বিয়ে আয়োজনের দায়িত্ব পাত্র সৌম্যদীপের কাঁধে। গত ২৪ নভেম্বর মালদহের মঙ্গলবাড়ির সুতপা মৈত্রের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। মঙ্গলবার নববধূকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন সৌম্যদীপ। 

    বাড়িতে আত্মীয় স্বজন, অতিথি অ্যাপায়ণের মাঝেও নির্বাচন কমিশনের কাজ করে চলেছেন তিনি। বুধবার ছিল ভাতকাপড় ও বউভাতের অনুষ্ঠান। এদিনও ইনিউমারেশন ফর্ম হাতে সমস্ত আয়োজন দেখভাল করলেন সৌম্যদীপ। সৌম্যর মায়ের কথা, ছেলে আমার কাজপাগল। ওর বাবা নেই। তাই বিএলও’র কাজের পাশাপাশি নিজের দায়িত্বটাও পালন করতে হচ্ছে।

    বিয়ের দিন থেকে স্বামী ভালোমতো সময় দিতে না পারলেও হাসিমুখে নববধূ সুতপা বলেন, এসআইআরের কাজটাও গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের দিনেও অনেকে সৌম্যকে ফোন করে ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণের বিষয়ে জেনে নিয়েছে। বিয়ের ব্যস্ততার মধ্যেও সৌম্য যেভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে সরকারি কাজ করছে তাতে খুশি নববধূ। সৌম্যদীপের বক্তব্য, বাবা নেই, মা বয়স্ক। তাই বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব আমার উপরে। আত্মীয়রাও পাশে রয়েছে। বিএলও হিসেবে সরকারি কাজটাও সময়মতো শেষ করতে হবে। দু’দিকে তাল মিলিয়েই কাজ করছি। বউভাতে এসে কাজের প্রতি পাত্র বিএলওর একাগ্রতা দেখে খুশি আত্মীয় স্বজন থেকে অতিথিরা। • স্ত্রীকে পাশে বসিয়েই ইনিউমারেশন ফর্ম ডিজিটাইজ করছেন বিএলও। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)