• গোষ্ঠীসংঘর্ষ, কালিয়াচকে ফের চলল গুলি, মুখমন্ত্রীর সফরের আগে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
    বর্তমান | ২৭ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ: আগামী সপ্তাহে জেলা সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নের মুখে পুলিশ। একই দিনে কালিয়াচকের একজনের গুলিবিদ্ধ দেহ ও আরেক তৃণমূলকর্মীর ক্ষতবিক্ষত দেহ মেলার পর এবার গোলাগুলি চলল ব্লকের মোজামপুরে।

    পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে বহুদিন ধরেই বিবাদ এনারুল শেখ ও আসাদুল্লাহ শেখ গোষ্ঠীর। আগেও তাদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে। বুধবার দুপুর থেকেই এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে চাপা উত্তেজনা চলতে থাকে। বেলা গড়াতেই শুরু হয় সংঘর্ষ। মূলত এলাকা দখল, জমির দালালি সহ নানা বিষয়ে বিবাদে এই সংঘর্ষ থেকে চলে গুলি। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে গুলির খোল। গোটা এলাকায় কার্যত অঘোষিত কার্ফু। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় এসডিপিওর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী। নামানো হয়েছে র‍্যাফও। কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে গিয়ে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব বলেন, পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।

    কালিয়াচকে একের পর এক গুলি চালানোর ঘটনায় পুলিশি নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সবকটি ঘটনাতেই দেশি কাট্টা ব্যবহার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। মূলত ঝাড়খণ্ড ও বিহার থেকে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র মালদহে ঢুকছে বলে খবর। তাহলে সেই অস্ত্র ধরা পড়ছে না কেন, তার উত্তর নেই।

    এদিকে, মঙ্গলবার রাতে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে মাথায় পরপর তিন রাউন্ড গুলি করা হয়েছিল কালিয়াচকের আজহার আলিকে। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, পুরনো শত্রুতা থেকেই নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে তাঁকে। সন্দেহভাজন তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। জানার চেষ্টা হচ্ছে এত আক্রোশ কেন! পুলিশ সুপার বলেন, তদন্ত শুরু হয়েছে। সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শীঘ্রই দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হবে। 

    পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আজহার ঘুরে ঘুরে পাঁপড় বিক্রি করতেন। মেরেকেটে তাঁর সারাদিনের আয় আড়াইশো থেকে তিনশো টাকা। এমন একজনকে কেউ বা কারা শুধুমাত্র ছিনতাই করার জন্য গুলি করবে, মনে করছেন না তদন্তকারীরা। তাই এক্ষেত্রে উঠে আসছে শত্রুতার জেরে খুনের মতো কারণ। মঙ্গলবার রাতে কালিয়াচক থানা এলাকার জালালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের লতিফপুরে জাতীয় সড়কের ধারে আজহারের মাথায় তিন রাউন্ড গুলি করা হয়। ছিনতাই করা উদ্দেশ্যে হলে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তিন রাউন্ড গুলি সাধারণত কেউ করবে না বলেই মত তদন্তকারীদের। 

    ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল থেকে তিনটি গুলির খোল উদ্ধার করেছে পুলিশ। রাতেই আজহারের ছেলে কালিয়াচক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগপত্রে তাঁদের কিছু পরিচিতের নাম রয়েছে। যদিও আজহারের পরিবারও এই খুনের কারণ নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

    মৃতের স্ত্রী মানুয়ারা বিবি বলেন, আমার স্বামী পাঁপড় বিক্রি করে বাড়ি ফেরার পথে কেন তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হল, বুঝতে পারছি না। শ্যুটআউট কাণ্ডের তদন্তে নেমে তিনজনকে আটক করার পর পুলিশ বুধবার কালিয়াচক থানায় দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে। এদিকে, এদিনই দুপুরে ময়নাতদন্ত করে পরিবারের হাতে মৃতদেহ তুলে দেওয়া হয়।
  • Link to this news (বর্তমান)