ফর্ম ডিজিটাইজের কাজে বাংলার চেয়ে অনেক পিছিয়ে যোগী-মোদির রাজ্য
বর্তমান | ২৭ নভেম্বর ২০২৫
সুমন তেওয়ারি, আসানসোল: পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে এসআইআর শুরু হতেই যেন যুদ্ধ জয়ের আনন্দে মেতেছিলেন বিজেপি নেতারা। তাঁরা বলতে শুরু করেছিলেন, এবার এক কোটি নাম বাদ যাবে। কাটা পড়বে এক কোটি ২০ লক্ষ ভুয়ো ভোটারের নাম। ইনিউমারেশন ফর্ম ডিজিটাইজ করার শেষ পর্যায়ে এসে দেখা যাচ্ছে, বাংলাকে ছুঁতে বহু দূর! উল্টে এসআইআর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে নাভিশ্বাস উঠছে যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশের। বুধবার সর্বশেষ নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত তথ্য বলছে, ডাবল ইঞ্জিন শাসিত রাজ্যে ফর্ম ডিজিটাইজ হয়েছে মাত্র ৪১.৪৪ শতাংশ। অর্থাৎ, উত্তরপ্রদেশে ১৫ কোটি ৩৮ লক্ষ ভোটারের মধ্যে ফর্ম ডিজিটাইজ হয়েছে মাত্র ৬ কোটি ৪০ লক্ষ। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, সবচেয়ে পিছিয়ে উত্তরপ্রদেশই। তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে বাংলা। এখানে ৭৮.৪২ শতাংশ ফর্ম ডিজিটাইজ হয়ে গিয়েছে। এমনকী, গুজরাতের মতো কম জনসংখ্যার রাজ্যের থেকেও এগিয়ে বাংলা। মোদি-অমিতের রাজ্যে ফর্ম ডিজিটাইজ হয়েছে ৭৩.৩৭ শতাংশ।
স্বাভাবিকভাবেই কমিশনের পরিসংখ্যানকে হাতিয়ার করে বিজেপিকে আক্রমণে নেমেছে তৃণমূল। রাজ্যের পঞ্চায়েত ও সমবায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘বিচার হওয়ার আগেই বাংলা দিল্লির কর্তাদের কাছে দোষী প্রমাণিত হয়ে যায়। ১০০ দিনের কাজে অনেক বেশি দুর্নীতি হয়েছিল গুজরাত ও উত্তরপ্রদেশে। অথচ, টাকা বন্ধ হল বাংলার গরিব মানুষের। দেশের ১২ জায়গায় এসআইআর শুরু হল। বিজেপি আগেই বলে দিল, বাংলায় এক কোটিরও বেশি অনুপ্রবেশকারী রয়েছে। কমিশনের তথ্য দেখে এখন বিজেপি নেতারা কি বলবেন?’ বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুইয়ের অবশ্য সাফাই, ‘পরিসংখ্যান নিয়ে রাজ্য সরকারের খুশি হওয়ার কিছু নেই। এই সাফল্য নির্বাচন কমিশনের।’ বাংলার মানুষ বরাবরই রাজনীতি সচেতন। এসআইআর শুরু হতেই সেটাই আরও একবার প্রমাণিত। একাধিক বিএলওর কাজের প্রশংসা করতে হচ্ছে কমিশনকে। কেউ ১৯ দিনে কেউ ২০ দিনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। ভোটাররাও সময় মতো ফর্ম ফিলআপ করে বিএলওর কাছে জমা দিয়েছেন। বুধবারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এসআইআর হওয়ার ১২ টি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের মোট ভোটার প্রায় ৫০ কোটি ৫৯ লক্ষ। ফর্ম ডিজিটাইজ পক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে ৬৩.২৩ শতাংশ। অথচ, বাংলার ভোটার রয়েছে ৭ কোটি ৬৪ লক্ষ ৫৯ হাজার ১২৯। তাদের মধ্যে ৬ কোটি এক লক্ষ ফর্ম ডিজিটাইজ হয়ে গিয়েছে। গুজরাতে মোট ভোটার ৫ কোটি ৭ লক্ষ। এর মধ্যে ফর্ম ডিজিটাইজ হয়েছে মাত্র ৩ কোটি ৭৬ লক্ষ। তার মানে বাংলার চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে মোদির রাজ্য। ফর্ম ডিজিটাইজের কাজে বাংলার গতি দূরন্ত হলেও বহু মানুষের সমস্যা হচ্ছে। যেমন, দুর্গাপুরের হস্টেল এভিনিউয়ের অঞ্জন দাস। বহু দশক ধরে এখানে তাঁর বসবাস। হস্টেল এভিনিউতে একসময় লতা মঙ্গেশকর থেকে বহু নামজাদা শিল্পী অনুষ্ঠান করতে আসতেন। অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন অঞ্জনবাবু। টোটন নামে তিনি এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। তাঁর কাছে ১৯৯৫ সালের ভোটার কার্ড রয়েছে। আবার সাম্প্রতিক ভোটার কার্ডও রয়েছে। ২০০২ সালের ভোটার তালিকাতেও নাম রয়েছে। তিনি ফর্ম পূরণ করে জমা করলেও বিএলও তা ডিজিটাইজ করতে পারছেন না। বিএলও সুমনকুমার শার বলেন, ‘রেকর্ড নট ফাউন্ড দেখাচ্ছে। কমিশন জানিয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’