নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: ‘২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম নেই আমার।’—বাড়ির সামনে বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পলকে দেখতে পেয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করলেন বৃদ্ধ। বিধায়কের প্রশ্ন, ‘তার আগে তো ভোট দিয়েছেন?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ দিয়েছি।’ বিধায়কের পাশে থাকা এক বিজেপি কর্মী আশ্বস্ত করে বললেন ‘ব্যাঙ্কের পাশবই থাকলে চিন্তার কিছু নেই।’ বলেই বৃদ্ধের বাড়ির উঠোন ছাড়লেন অগ্নিমিত্রা। সম্প্রতি, আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা এলাকার কালীপাহাড়িতে জনসংযোগে বেরিয়ে রীতিমতো বিড়ম্বনায় পড়তে হল বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদিকা অগ্নিমিত্রা পল।
আসানসোল পুরসভার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মহেন্দ্র সাউ। তিনি একজন আইনজীবী। আসানসোল বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যও। তাঁর স্ত্রী চঞ্চলা সাউও আইনজীবী। বহু বছর ধরেই তাঁরা এখানে বসবাস করছেন। দুই ছেলে, দুই বউমাকে নিয়ে ছন্দেই চলছিল সংসার। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় দু’ছেলের নাম ওঠেনি। তাঁরা তখন নাবালক। স্বামী, স্ত্রী দু’জনেই ২০০২ সালে ভোট দিয়েছেন। ফলে, এসআইআর নিয়ে তাঁদের বিন্দুমাত্র উদ্বেগ ছিল না। কিন্তু কমিশন ২০০২ সালের তালিকা প্রকাশ করতেই উৎকণ্ঠায় আইনজীবীর পরিবার। তালিকায় নাম নেই দম্পতির। তাঁদের দুই সন্তানও আইনজীবী। তাঁরাও পড়েছেন চিন্তায়। বাবা-মায়ের নাম না থাকায় এসআইআর ফর্মে ২০০২ সালের লিংকেজ খুজে পাচ্ছেন না তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপির ঘনিষ্ঠ এই পরিবার। তাঁরা এখন ভাবতে পারছেন না এমন হয়রানির শিকার হতে হবে। স্বভাবতই অগ্নিমিত্রাকে হাতের কাছে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দেন মহেন্দ্রবাবু। ছেলে শিবশঙ্কর সাউ বলেন, ‘বাবা ও মা দু’জনেরই নাম ২০০২ তালিকায় বাদ পড়েছে। এর জন্য আমরা দুই ভাইও সমস্যায় পড়েছি। বাড়ির কাছে বিধায়ক এলে বাবা বিষয়টি জানিয়েছেন। জানিনা সুরাহা মিলবে কি না! খুব চিন্তায় রয়েছি।’
এনিয়ে অগ্নিমিত্রা ফোন করা হলেও ধরেননি। বিজেপির রাজ্য কার্যকরী কমিটির সদস্য পবন সিং বলেন, ‘কোনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ পড়া সম্ভব নয়।’ পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাধিপতি বিশ্বনাথ বাউরি বলেন, ‘এসআইআর নিয়ে সকলেই আতঙ্কিত। বহু মানুষের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি বিধায়ক প্রশ্নের মুখে পড়বেন।’
অন্যদিকে, এসআইআর নিয়ে কমিশনকে তীব্র আক্রমণ শুরু করেছেন বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল এমপি কীর্তি আজাদ। রবিবার মায়াবাজারে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, ‘ইনিউমারেশন ফর্ম অবশ্যই পূরণ করে জমা করুন। না হলে আপনার মতো বৈধ ভোটারের জায়গায় বাইরের লোকের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। সেই অন্য লোকের ভোটার তালিকায় নাম তুলে ভোট চুরি করানো হবে। মনে রাখবেন এসআইআর করাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্দেশ কিন্তু অন্য জায়গার। শনিবারও দুর্গাপুর পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের সহায়তা কেন্দ্রে হাজির হয়েছিলেন কীর্তি। সেখানে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বলছে, ৭৫ শতাংশ ফর্ম জমা হয়েছে। বাস্তবে দেখা গিয়েছে, ৫০ শতাংশও জমা পড়েনি। বাকিটা কী ভুয়ো? সেখানেও তিনি মনযোগ দিয়ে ফর্ম পূরণের পরামর্শ দেন।’