সংবাদদাতা, রামপুরহাট: প্রশ্ন: কোন স্টেশনে একটি ট্রেন দু’বার থামে। উত্তর, নলহাটি জংশনে। না, কোনও ক্যুইজ কনটেস্টের প্রশ্ন নয়। এটাই বাস্তব চিত্র নলহাটি জংশনের। রেলের পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। চায়ের ঠেক থেকে বাসিন্দাদের মধ্যে হাসাহাসি চলছে। প্ল্যাটফর্ম না বাড়িয়ে ট্রেন দু’বার দাঁড়ানোয় ক্ষুব্ধ যাত্রীদের অনেকেই।
বর্ধমান-সাহেবগঞ্জ শাখায় নলহাটি জংশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। অথচ স্টেশনটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। এখানে সতীর ৫১পীঠের অন্যতম নলাটেশ্বরী মন্দিরের পাশাপাশি রয়েছে বৃহৎ পাথর শিল্পাঞ্চল। পর্যটকরা এখানে এসে ভোগান্তির মুখে পড়েন। কারণ, রেললাইন থাকলেও অধিকাংশ ট্রেনের স্টপেজ নেই। হাতে গোনা কয়েকটি লোকাল ট্রেন থাকলেও তা নির্দিষ্ট সময়ে চলাচল করে না। তেমনই অত্যন্ত ছোট প্ল্যাটফর্ম। যাত্রীদের সুবিধার্থে স্টেশনের তেমন উন্নয়ন হয়নি। প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য কম হওয়ায় এক্সপ্রেস ট্রেন দাঁড়ানোর পর কিছু কামরা প্ল্যাটফর্মের বাইরে থাকে। তখন যাত্রীদের ওঠানামায় অসুবিধে হতো। লাগেজ নিয়ে পাথরময় লাইনে নেমে ঝুঁকি নিয়ে পার হয়ে অনেকটা হেঁটে প্ল্যাটফর্মে আসতে হতো। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও অসুস্থ রোগীদের সমস্যায় পড়তে হয়। অনেকে লাইনে পড়ে গিয়ে জখম হয়েছেন।
প্রায় তিন বছর ধরে স্টেশনের পরিকাঠামো উন্নয়ন সহ বেশকিছু দাবিতে আন্দোলন করে আসছে নলহাটি নাগরিক মঞ্চ। লাইনে নেমে ট্রেন অবরোধও করে তারা। গত ১১ এপ্রিল নলহাটি জংশন পরিদর্শনে এসে মঞ্চের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন পূর্বরেলের জেনারেল ম্যানেজার মিলিন্দ কে দেউস্কর। নাগরিক মঞ্চের দাবি, সেইসময় প্ল্যাটফর্ম বাড়ানো সহ জংশনের সামগ্রিক বিকাশে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে তার কোনও প্রতিফলন ঘটেনি। ফলে সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার থেকে এই জংশনে এক্সপ্রেস ট্রেনগুলি দু’বার করে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ট্রেন একবার থামার পর পিছনের কামরার যাত্রীদের জন্য আবার প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছে। এতে যাত্রীদের সুবিধা হচ্ছে। তবে রেলের পরিকাঠামো নিয়ে যাত্রীরা প্রশ্ন তুলছেন। তাঁরা পরিচিতদের প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন, কোন স্টেশনে একটি ট্রেনের দু’বার স্টপেজ দেয়? অনেকে সঠিক উত্তর দিচ্ছেন। তাঁদেরই একজন রফিকুল আলম বলেন, শুনেছি আগে কিছু স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ছোট হওয়ায় দু’বার ট্রেন থামত। রেল কর্তৃপক্ষ সেই অতীত ফিরিয়ে আনল। যা ক্যুইজেরও প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। বন্দে ভারতের যুগে রেল ব্রিটিশ আমলে ফিরলে মানুষ তো হাসিঠাট্টা করবেই।
এদিন নলহাটির ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা এই বিষয় সহ সময়মতো লোকাল ট্রেন চালানোর দাবিতে ডেপুটেশন দেন। সমিতির জয়েন্ট সেক্রেটারি সুদীপ সাহা বলেন, প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারণের বদলে মঙ্গলবার থেকে বিভিন্ন এক্সপ্রেস ট্রেন দু’বার থামছে। এতে যাত্রীদের কিছুটা সুবিধা হয়েছে। কিন্তু একবার থামার পর যখন ট্রেন চলতে শুরু করে আবার থামছে, এতে বিপদও ঘটতে পারে। স্টেশন ম্যানেজার জানিয়েছেন, এবার থেকে এক্সপ্রেস ট্রেনগুলি দু’বার থামবে। পূর্বরেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক দেব প্রকাশ বলেন, রেল কখনও চায় না একটি স্টেশনে ট্রেন দু’বার স্টপেজ দিক। প্ল্যাটফর্ম ছোট হওয়ার কারণে এটা করতে হয়। যাত্রী সুরক্ষার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত। নিজস্ব চিত্র