• দক্ষিণ ২৪ পরগনায় হাতুড়েদের নিয়ে মাথাব্যথা বাড়ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের
    বর্তমান | ২৭ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: সাধারণ জ্বর হোক বা সাপে কাটার মতো মারাত্মক ঘটনা—হাসপাতালে যাওয়ার আগেই হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে ছুটছেন বহু গ্রামবাসী। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এই প্রবণতা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে এবার হাতুড়ে চিকিৎসকদের একাংশ প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছেন। কারণ, গত কয়েক মাসে এই হাতুড়ে ডাক্তারদের কাছে চিকিৎসা করিয়ে অবস্থার অবনতি হয় দু’জনের। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁদের। এছাড়াও এক হাতুড়ে ডাক্তার নিজেই নিজের চিকিৎসা করেও শেষ রক্ষা হয়নি। তাঁর প্রাণ গিয়েছে। জানা গিয়েছে, যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের শরীরে ডেঙ্গুর উপসর্গ ছিল। ওই ডাক্তারদের কাছে গিয়েছিলেন তাঁরা। রোগীদের হাসপাতালে পাঠানোর বদলে দিনের পর দিন তাঁরাই চিকিৎসা চালিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ। পরে যখন শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়েছে, তখন হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে রোগীকে। কিন্তু তখন আর বাঁচানো যায়নি। জেলার বেশ কিছু জায়গায় হাতুড়ে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা জ্বরের রোগীদের হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার বদলে নিজেরাই চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও এই হাতুড়ে ডাক্তারদের বারবার স্বাস্থ্যদপ্তর থেকে বলা হয়, জ্বর বা মশাবাহিত কোনও রোগ ধরা পড়লে রোগীকে  হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দিতে হবে। কিন্তু তাঁরা এসব গ্রাহ্য করছেন না বলে অভিযোগ। ফলে হাতুড়েদের নিয়ে চিন্তা বেড়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তাদের। দক্ষিণ ২৪ পরগনা স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য আধিকারিক মুক্তিসাধন মাইতি বলেন, ‘আমরা এই ধরনের ডাক্তারদের বারবার সতর্ক করছি। তবুও অনেক গুরুতর রোগীকে ধরে রাখছেন তাঁরা। আমরা আবারও আবেদন করব, যাতে ওঁরা সব ধরনের রোগীর চিকিৎসা না করে তাঁদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।’

    জানা গিয়েছে, বিষ্ণুপুর ২, ভাঙড় ২ এবং ক্যানিং ২ ব্লক এলাকায় এই মৃত্যুর ঘটনাগুলি ঘটেছে। জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের বক্তব্য, এমনিতেই হাতুড়ে ডাক্তারদের উচ্চমানের প্রশিক্ষণ থাকে না। সামান্য সর্দি-কাশির চিকিৎসা করলে ঠিক আছে। কিন্তু যখন ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার মতো রোগের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, তখনও কেন তাঁদের একাংশ নিজেরাই চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেটাই আশ্চর্যের। বেশ কিছু জায়গায় দেখা গিয়েছে, হাতুড়ে ডাক্তাররা ঘুপচি ঘরকেই কার্যত হাসপাতালে পরিণত করে ফেলেছেন। জ্বরের রোগী এলেই তাঁদের স্যালাইন লাগিয়ে রেখে দেওয়া হচ্ছে। দু’টি মৃত্যুর ক্ষেত্রে একই কায়দায় চিকিৎসা চলছিল বলে খবর পেয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। কিন্তু এত কিছুর পরও রোগীর পরিজনরা হাতুড়ে ডাক্তারের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে দ্বিধা বোধ করেন। সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে আগামী দিনে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা চিকিৎসক মহলের।  
  • Link to this news (বর্তমান)