নাগরিকত্বের ভয় দেখিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে: মমতা
বর্তমান | ২৭ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দেশ স্বাধীন হওয়ার ৭৮ বছরের মাথায় পরীক্ষায় বসতে হয়েছে বাংলার নাগরিকদের। সেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে বঙ্গবাসীকে উত্তর দিতে হচ্ছে, তাঁরা স্বাধীন ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণ করেছেন কি না! সৌজন্যে নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকার স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন (এসআইআর)। এর মাধ্যমে আদতে সাধারণ মানুষকে নাগরিকত্বের ভয় দেখিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে— বুধবার আবারও তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট, ‘স্বাধীনতার এত বছর পর মানুষের নাগরিকত্ব, ভোটাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আমাদের নতুন করে প্রমাণ দিতে হচ্ছে দেশের নাগরিক কি না। আমি স্তম্ভিত!’ আর তাই সংবিধান দিবসে কলকাতার রেড রোডে ‘সংবিধান প্রণেতা’ বি আর আম্বেদকর মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি শপথ নিয়েছেন, ‘গণতন্ত্রকে যে কোনও মূল্যে রক্ষা করব!’
সংবিধান দিবসের প্রাক্কালেই সামনে এসেছে আরও এক ‘চাঞ্চল্যকর’ তথ্য। আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে রাজ্যসভায় দেওয়া যাবে না ‘জয় হিন্দ’, ‘বন্দেমাতরম’ স্লোগান। বুধবারই ‘বর্তমান’-এ প্রকাশিত হয় সেই খবর, যা নজর এড়ায়নি মুখ্যমন্ত্রীরও। তার প্রেক্ষিতেই এদিন তিনি তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। বলেছেন, ‘সংসদে জয় হিন্দ এবং বন্দেমাতরম বলতে পারব না— এটা করে কি চাইছে বিজেপি? বাংলার অস্তিত্ব ও পরিচয় মুছে দিতে? বাংলা তো ভারতের বাইরে নয়! আমরা গর্বিত যে, বাংলা বরাবরই গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের জন্য লড়েছে। বন্দেমাতরম জাতীয় গীত। যাঁরা স্বাধীনতা আন্দোলন করেছিলেন তাঁদের স্লোগান ছিল, জয় হিন্দ, বন্দেমাতরম। কী করে ভুলে যাচ্ছে ওরা? যারা এই স্লোগান মুছে দিতে চাইছে, তারাই ভেঙেচুরে শেষ হয়ে যাবে।’
যাবতীয় বিতর্কের মধ্যেও অবশ্য আম জনতার আতঙ্ক কাটছে না। ইনিউমারেশন ফর্ম জমার সময়সীমা শেষ হয়ে আসছে দ্রুত। আর মাত্র ১৩ দিন পর প্রকাশিত হবে খসড়া ভোটার। কী হবে নাম না থাকলে? ভয়-উদ্বেগ প্রতিদিন আরও গভীরভাবে গ্রাস করছে গরিব, খেটে-খাওয়া অগণিত পরিবারকে। প্রবল মানসিক চাপে ইতিমধ্যে প্রায় ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বাংলাতে। সেই তালিকায় বিএলওরাও রয়েছেন। গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, কেরল, তামিলনাড়ুতে পর্যন্ত আত্মঘাতী হয়েছেন বিএলওরা। ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এসআইআর হচ্ছে। তার মধ্যে অর্ধেক রাজ্যেই যদি এসআইআরকে কেন্দ্র করে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, তাহলে সেই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। আর সেই প্রশ্নটাই সংবিধান দিবসে তুলে ধরেছেন মমতা। রেড রোডে আম্বেদকর মূর্তিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের পর তিনি বলেন, ‘বিএলও এবং আম জনতার উদ্দেশে বলব, আপনারা কেউ আত্মহত্যা করবেন না— জীবন খুব মূল্যবান। বাংলায় যে ক’জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তার সব রেকর্ড আমাদের কাছে আছে। অন্য রাজ্যগুলিতে বিএলও মৃত্যুর দায় কার? সেখানে বিজেপি তো ক্ষমতায় আছে!’ নাম না করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দিকে আঙুল তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘এখানকার কুর্সিবাবু বিএলওদের চাকরি খেয়ে নেওয়ার ভয় দেখাচ্ছেন। যখন আপনি অন্যদের ভয় দেখাচ্ছেন, তখন আপনার চাকরি বাঁচাবে কে?’
এসআইআর প্রক্রিয়ায় বিরোধী নন মমতা। কিন্তু বাংলার ভোটের আগে তড়িঘড়ি তা কার্যকর করার পিছনে তিনি অন্য চক্রান্ত দেখছেন। বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে চলা নির্বাচন কমিশনের আচরণ দেখে তাই মুখ্যমন্ত্রীর ভবিষ্যদ্বাণী, ‘২০২৯ সালে কেন্দ্রের সরকারে আসবে না বিজেপি। তার আগেই সরকার পড়ে যেতে পারে।’