• ৭৮ শতাংশ ডিজিটাইজেশনেই বাংলায় বাদ ২৮ লক্ষ ভোটার? মৃত প্রায় ৯ লক্ষ, খোঁজ নেই বাকিদের
    বর্তমান | ২৭ নভেম্বর ২০২৫
  • শুভঙ্কর বসু, কলকাতা: ভোটারদের থেকে পূরণ করা ইনিউমারেশন ফর্ম সংগ্রহের পর ডিজিটাইজেশনের কাজ চলছে জোরকদমে। আপাতত খসড়া তালিকা থেকে কতজন ভোটারের নাম বাদ পড়তে চলেছে, তা নিয়ে আতঙ্ক চরমে। আর এর মধ্যেই কমিশন সূত্রে খবর, আপাতত যে সংখ্যক ফর্ম ডিজিটাইজড হয়েছে, তার সঙ্গে প্রায় ২৮ লক্ষ ভোটারের তথ্য ২০০২ সালের তালিকার সঙ্গে ম্যাপিং ও ম্যাচিং (২০০২ সালের তালিকার সঙ্গে ২০২৫ সালের তালিকার মিল) করানো সম্ভব হয়নি। তার মধ্যে প্রায় ৯ লক্ষ মৃত ভোটার। বাকিদের কোনও হদিশ নেই। প্রশ্ন উঠছে, তালিকা থেকে কি তাহলে ২৮ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়া একরকম নিশ্চিত? ইঙ্গিত তেমনই। 

    প্রতিদিন রাজ্যজুড়ে ইনিউমারেশন ফর্ম ডিজিটাইজেশনের তথ্য সংগ্রহ করছে কমিশন। বুধবার পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ৭৮.৪২ শতাংশ ফর্ম ডিজিটাইজেশনের কাজ শেষ হয়েছে। আর জেলাগুলি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এযাবৎ প্রায় ৯ লক্ষ মৃত ভোটারের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। ফলে ওই সংখ্যক মৃত ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ যাওয়া কার্যত স্থির। বাকি ১৯ লক্ষ ভোটারকে ‘ডুপ্লিকেট’, ‘শিফটেড’ অর্থাৎ স্থানান্তরিত এবং ‘অ্যাবসেন্ট’ বা অনুপস্থিত ভোটার হিসেবে চিহ্নিত করেছে কমিশন। ফলে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আপাতত খসড়া তালিকা থেকে মোট ২৮ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়ছে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা। কমিশনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ডিজিটাইজেশনের কাজের শেষ পর্যায়ে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। ঠিক কত জন ভোটারের ম্যাপিং ও ম্যাচিং সম্ভব হল না, ৪ ডিসেম্বর গোটা প্রক্রিয়া শেষের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে যে সংখ্যক ভোটারের নাম বাদ পড়বে, তাঁদের সকলের তালিকা পঞ্চায়েত অফিস, বিডিও অফিস এবং জেলাশাসকের দপ্তরে টাঙিয়ে দেওয়া হবে। কারও নাম ভুলবশত বাদ গিয়েছে মনে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এইআরও, ইআরও বা জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযোগ জানাতে পারবেন। 

    ভোটার তালিকায় মৃত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে আগেই আধার-তথ্য সংগ্রহ করেছে কমিশন। ২০০৯ সালে আধার চালু হওয়ার পর থেকে এরাজ্যে প্রায় ৩৪ লক্ষ মৃত ব্যক্তির আধার নম্বর কমিশনকে দিয়েছে ইউআইডিএআই বা আধার কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও কমিশনকে আধার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে ১৩ লক্ষ মানুষের আধার কার্ড নেই। শুধু আধার কর্তৃপক্ষই নয়, রাজ্যের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করছে কমিশন। যেসব অ্যাকাউন্টে দীর্ঘদিন কেওয়াইসি আপডেট করা হয়নি, মূলত সেই গ্রাহকদের তথ্যও রয়েছে কমিশনের কাছে। এছাড়াও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প, যেমন বিধবা ভাতা ও সমব্যথীর মতো প্রকল্পে আবেদনকারীদের তথ্যও লিপিবদ্ধ করেছে কমিশন। জানা যাচ্ছে, যে সংখ্যক ফর্ম ম্যাপিং ও ম্যাচিং করা সম্ভব হচ্ছে না, সেই সব ফর্মের সঙ্গে আগে থেকে প্রাপ্ত মৃত ব্যক্তির আধার, ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে আবেদনকারীদের তথ্য মিলিয়ে দেখার কাজ চলছে। খসড়া তালিকা প্রকাশের আগে পর্যন্ত এই কাজ চলবে।   

    এদিকে কমিশন সূত্রে আরও খবর, অন্য জেলাগুলির তুলনায় শহর কলকাতায় ডুপ্লিকেট-শিফটেড-ডিলিটেড ভোটারের সংখ্যা বেশি। পাশাপাশি রয়েছে ফর্ম সংগ্রহ না হওয়ার সমস্যাও। জানা গিয়েছে, কলকাতায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি ফর্ম এখনও সংগ্রহ করা যায়নি।
  • Link to this news (বর্তমান)