• খসড়া ভোটার লিস্টে বাড়তি সময়! ‘SIR’ মামলায় সুপ্রিম-ইঙ্গিত
    এই সময় | ২৭ নভেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: রাজ্যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের সময়সীমা কি বাড়তে পারে? একাধিক রাজনৈতিক দলের ‘সার’ সংক্রান্ত মামলার প্রেক্ষিতে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন, ডিএমকে’র আইনজীবী নেতা আরএস ভারতী, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পি সম্মুগম সহ বিভিন্ন দলের সাংসদ, বিধায়করা ‘সার’ নিয়ে মামলা দায়ের করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চে এ বিষয়ে বুধবার শুনানি হয়।

    শুনানির সময়ে তৃণমূলের আইনজীবী যুক্তি দেন, অল্প সময়ের মধ্যে ‘সার’ করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বুথ লেভেল অফিসারদের উপর চাপ পড়েছে। কতজন বিএলও–র মৃত্যু হয়েছে, কতজন অসুস্থ হয়েছেন, সে তথ্যও আদালতে জানানো হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার যাতে গ্রাউন্ড রিয়েলিটি নিয়ে তাঁদের বক্তব্য বিচারপতিদের কাছে জানাতে পারে সেই সুযোগ দেওয়ার আর্জিও জানিয়েছেন প্রবীণ আইনজীবী।

    দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘যদি দেখা যায় উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, অনেক মানুষের নাম (ভোটার তালিকায়) অন্তর্ভুক্ত হয়নি, সেক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি (আদালতের) হস্তক্ষেপ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’ উল্লেখ্য, আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের নির্দেশ ইতিমধ্যেই দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আদালতে এ দিন তারিখের বিষয়টি উল্লেখ করা হলে বিচারপতি সূর্য কান্ত মন্তব্য করেন, ‘তাতে কী? আপনারা যদি যথাযথ ভিত্তি দেখাতে পারেন, তাহলে আমরা তারিখ বাড়ানোর নির্দেশ দিতেই পারি।’

    এ দিন শুনানির পরে তৃণমূলের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মৌখিক ভাবে আদালত এমন মন্তব্য করেছে। ওই মন্তব্য থেকে এখনই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায় না।’ সুপ্রিম কোর্টে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়, গ্রাউন্ড লেভেলে মসৃণ ভাবে কাজ চলছে। রাজনৈতিক নেতারা অহেতুক আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন। কমিশনের তরফে আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী দাবি করেন, ‘মামলাকারীরা যে পরিস্থিতির ছবি আদালতে তুলে ধরেছেন, তার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই।’ কেরালার উদাহরণ দিয়ে কমিশনের আইনজীবী জানান, সেখানে ৯৯ শতাংশ এনিউমারেশন ফর্ম বিলি হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, ডিএমকে’র আইনজীবী পাল্টা তথ্য দিয়ে দেখান, তামিলনাড়ুতে মাত্র ৫০ শতাংশ ফর্ম বিলি হয়েছে। সেখানে বৃষ্টি এবং সম্ভাব্য ঝড়ের পরিস্থিতিতে বিএলও’দের বাড়ি বাড়ি যেতে হচ্ছে। এরপর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ‘সার’ কতটা মসৃণ ভাবে হচ্ছে তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের তরফে পাল্টা যুক্তি দেওয়া হলেও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, আগামী ১ ডিসেম্বর তাদের লিখিত বক্তব্য আদালতকে জানাতে হবে।

    রাজনৈতিক দলের নেতারা অহেতুক আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন বলে কমিশন সুপ্রিম কোর্টে যুক্তি দেওয়ায় রাজ্যের আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গ্রাউন্ড রিয়েলিটি জানে না। কাজের চাপে কোথাও বিএলও–রা আত্মহত্যা করেছেন, কোথাও অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন––এই পরিস্থিতিকে কী ভাবে মসৃণ বলা যায়? বিএলও’রা তো কমিশনের জন্যই আতঙ্কিত। কমিশন তো কেন্দ্রে যাঁরা ক্ষমতায় রয়েছে তাঁদের–ই কথা বলছে।’ যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘দেশের ১২ টি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে ‘সার’ হচ্ছে, কোথাও আতঙ্ক নেই, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল আতঙ্ক ছড়াচ্ছে নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক রক্ষা করার স্বার্থে। খসড়া তালিকা প্রকাশের সময় বর্ধিত হবে কি না তা কমিশনের বিষয়, ফলে এই নিয়ে আমরা কিছু বলছি না।’

    সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ির কথায়, ‘২০০২ সালে স্পেশাল রিভিশন হয়েছিল তখন কেন আতঙ্ক ছড়ায়নি? সে দিন–ও তো রাজনৈতিক দল ছিল। নির্বাচন কমিশন বেআইনি ভাবে ভোটার তালিকার রিভিশনের সঙ্গে নাগরিকত্বের বিষয় জুড়ে দিয়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে।’

    সুপ্রিম কোর্টে এ দিনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ মামলাকারীদের কাছে জানতে চায়, তাঁরা কি শুধু ‘সার’ এর প্রক্রিয়াগত সমস্যাকে চ্যালেঞ্জ করছেন? উত্তরে প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, ‘সার’ এর টাইমিং এবং প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।’

  • Link to this news (এই সময়)