• অতিরিক্ত কাজের চাপ? BLO-র ব্রেন স্ট্রোক সাগরে
    এই সময় | ২৭ নভেম্বর ২০২৫
  • এই সময়, নামখানা ও গোপালনগর: রাজ্যজুড়ে সার প্রক্রিয়া একেবারে শেষ পর্বে। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ফর্ম বিলি ও সংগ্রহের পর সেই সব তথ্য ডিজিটাইজেশনের কাজও শেষের পথে। এই অবস্থায় শেষ মুহূর্তের কাজের চাপে হাঁসফাঁস করছেন বিএলও–রা। মঙ্গলবার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোপালনগর ও নামখানায় দু’জন বিএলও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুই ক্ষেত্রেই পরিবারের অভিযোগ, অফিস থেকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য অত্যধিক চাপ দেওয়া হয় দু’জনকেই। মঙ্গলবারই কাজ করতে করতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বাঁকুড়ার এক মহিলা বিএলও।

    সাগর বিধানসভার নামখানা ব্লকে অতিরিক্ত কাজের চাপে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ২৭৬ নম্বর বুথের বিএলও দেবাশিস দাস (৫০)। মঙ্গলবার গভীর রাতে তিনি আচমকা ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ডায়মন্ড হারবারের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি আইসিইউতে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ভর্তি। চিকিৎসকদের মতে, তাঁর অবস্থা অতিমাত্রায় সঙ্কটজনক। অন্যদিকে, বনগাঁর গোপালনগরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিএলও সুশান্ত টিকাদার চিকিৎসাধীন কল্যাণীর একটি হাসপাতালে। পরিবারের দাবী সার নিয়ে অত্যধিক কাজের চাপ ও টেনশন থেকেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

    দেবাশিস দাস স্থানীয় মাতঙ্গিনী শিক্ষাকেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক। সার–এর ফর্ম দ্রুত ডিজিটাইজ করার কাজেই পিছিয়ে পড়েছিলেন তিনি। পরিবারের দাবি, গত এক সপ্তাহ ধরে বিডিও অফিস থেকে তাঁকে দ্রুত ডেটা আপলোড করতে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। অসুস্থ দেবাশিসের স্ত্রী রিনা দাস বলেন, ‘রাতেও অফিসের ফোন আসত। বলত, চাপটা আর নিতে পারছি না। কাল রাতে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যায়।’ প্রতিবেশী প্রতাপ জানা বলেন, ‘দেবাশিসবাবু দায়িত্ববান মানুষ। মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় ৫৫ শতাংশ ডিজিটাইজেশন সম্পূর্ণ করেছিলেন। বাকিটা দ্রুত করার জন্য চাপ বাড়ছিল।’

    ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে তৃণমূল–বিজেপির রাজনৈতিক চাপানউতোর। জেলা প্রশাসনের দাবি, অসুস্থ বিএলও–র পরিবারের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।

    অন্যদিকে, বনগাঁ উত্তর বিধানসভার গোপালনগর–১ পঞ্চায়েতের ১০৬ নম্বর বুথের বিএলওর দায়িত্বে রয়েছেন ৫৩ বছরের সুশান্ত টিকাদার। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা সুশান্ত প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর সুগার এবং ব্লাড প্রেশারের সমস্যা ছিল। বিএলওর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অত্যধিক কাজের চাপে টেনশন করছিলেন। সময় মতো এনিউমারেশন ফর্ম কমিশনের অ্যাপে আপলোড করা নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল তাঁরও। সোমবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। প্রথমে বনগাঁ হাসপাতালে ও পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় সুশান্তকে নিয়ে আসা হয় কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু হাসপাতালে।

    সুশান্তর স্ত্রী সবিতা বলেন, ‘ওঁর প্রেশারের সমস্যা ছিল। ফর্ম বিলির পর সংগ্রহ করা ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু কমিশনের অ্যাপে সার্ভারের সমস্যায় আপলোড করতে পারতেন না। অতিরিক্ত চাপে টেনশন থেকেই তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।’ বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূলের সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে বিজেপি এ সব করে মানুষকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছে।’ বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া বলেন, ‘উনি আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। তৃণমূল যে ভাবে প্রচার করছে তাতেই বিএলওরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।’

    মঙ্গলবার দুপুরে ‘সার’-এর কাজ করার সময়ে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন বাঁকুড়ার পাত্রসায়র ব্লকের নারায়ণপুর ২২৪ নম্বর বুথের বিএলও সবিতা সর্দার। পেশায় তিনি আইসিডিএস সুপারভাইজ়ার।

  • Link to this news (এই সময়)