শবরদের অনেকেরই রেশনকার্ড কিংবা আধারকার্ড করাতে সরকারি দফতরে যেতে অনীহা রয়েছে। চিকিৎসা করাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতেও অনেকে গড়িমসি করেন। অথচ এসআইআরের ফর্ম জমা করার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন শবরেরা। প্রশাসনের দাবি, শবর সম্প্রদায়ের কেউ কেউ ফর্ম হাতে পাওয়ার দু’দিনের মধ্যে তা পূরণ করে দিয়েছেন বিএলও-কে। ভিন্ রাজ্যে কাজের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া কোনও কোনও শবর সম্প্রদায়ের শ্রমিক ফর্ম পূরণ করতে মাঝপথ থেকেই ফিরে এসেছেন বাড়িতে। জেলার একাধিক শবরপাড়ার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এই উলটপূরণ ঘটিয়েছে এলাকার যুবক, বিএলও সরকারি কর্মী এবং রাজনৈতিক দলের কর্মীদের সক্রিয়তা। ব্লক প্রশাসন শবর টোলায় কর্মীদের পাঠিয়ে ফর্ম পূরণে সহায়তা করেছে বলে জানিয়েছে শবর খেড়িয়া কল্যাণ সমিতি। সাহায্য পেয়েছে তৃণমূলের ‘ভোট রক্ষা শিবির’ থেকেও।
বলরামপুরের হাড়জোড়া গ্রামের শবরপাড়াতেও একই ছবি। বলরামপুর ব্লক প্রশাসন জানাচ্ছে, ওই পাড়ার ৭৩ জন শবর ভোটারের সমস্ত ফর্ম সংগ্রহ করে পোর্টালে তোলা হয়ে গিয়েছে। একই ছবি অন্য বেলা অঞ্চলেও। সেখানে প্রায় ৮০ জন শবর ভোটারের তথ্য তোলার কাজ ১০০ শতাংশ সম্পূর্ণ।
প্রশাসনের দাবি, নিয়মিত প্রচার ও সচেতনতামূলক কর্মসূচির ফলেই এই সাফল্য। শুধু শবর সম্প্রদায় নয়, বীরহোড় সম্প্রদায়ের ভোটারদের ফর্ম জমার কাজও শেষ।
নথিপত্রের বেশ কিছু সমস্যার জন্য এখনও কয়েকজন শবরের ফর্ম জমা দেওয়া বাকি রয়েছে। সর্বশেষ এসআইআরের তালিকায় অনেকের মা,বাবা কিংবা ঠাকুরদা, ঠাকুমার নাম না থাকায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। বান্দোয়ানের চিরুডি শবরপাড়ার বাসিন্দা সোনামনি শবর বলেন, ‘‘আমরা এখনও ফর্ম জমা করতে পারিনি। আমার শ্বশুর-শাশুড়ি কারও নাম নেই ২০০২-এর ভোটার তালিকায়। তবে পাড়ার বাকি সবারই ফর্ম জমা করা হয়ে গিয়েছে।’’ ‘খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতির’ সভাপতি প্রশান্ত রক্ষিত বলেন, ‘‘শবরদের প্রায় ৯০ শতাংশের ফর্ম পূরণ করে জমা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। যে সব পরিযায়ী শ্রমিক নথিপত্র সঙ্গে নিয়ে বাইরে কাজে গিয়েছেন, তাঁদের বাড়ি ফিরতে বলা হয়েছে। আবার অনেকের মা-বাবা সহ নিজের নথিপত্র না থাকায় একটু দেরি হচ্ছে। তবে প্রশাসন তাঁদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছে।’’ ২০০২ সালের নথি না থাকা নিয়ে সমস্যা প্রসঙ্গে পুরুলিয়ার জেলাশাসক কোন্তম সুধীর বলেন, ‘‘পরবর্তীতে এ নিয়ে শুনানির সময়ে তাঁদের সাহায্য করতে প্রশাসন সম্পূর্ণ ভাবে পাশে থাকবে।’’